নীতিহীন রাজনীতি

লেখক
আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

যুক্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যের অধিকার খর্ব করার  যতগুলি অস্ত্র কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে আছে তার মধ্যে সি.বি.আই একটি৷ রাজ্য রাজনীতিতেও বিরোধী পক্ষ রাজ্যে ঘটিত যেকোন অপরাধের ক্ষেত্রেই নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে সিবিআই তদন্তের  দাবী করে৷ কিন্তু প্রশ্ণ হচ্ছে সিবিআইকি সবসময় নিরপেক্ষ তদন্ত করে৷ বা বিরোধীপক্ষ কি সবসময় নিরপেক্ষতার স্বার্থে সিবিআই তদন্তের দাবী তোলে৷ রাজ্যের সি আই ডি যেমন রাজ্য সরকারের অধীনে সিবিআই তেমনি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে৷ তাই নিরপেক্ষতার প্রশ্ণে উভয়েই সন্দিহান, রাজনৈতিক দলগুলো এটা জানে না তা নয়৷ তাই বিরোধীদের সিবি আই তদন্ত দাবী করার উদ্দেশ্য সব সময় নিরপেক্ষ নয়, রাজনৈতিক স্বার্থে শাসকদলকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যেই সিবি আই তদন্তের দাবী তোলা হয়৷

উত্তরপ্রদেশের হাতরসের নারকীয় ঘটনার মূল অভিযুক্ত আজও অধরা৷ সেখানে কিন্তু সিবিআই তদন্ত হচ্ছে না৷ কারণ কেন্দ্র ও রাজ্যে শাসন ক্ষমতায় একই দল৷

তাই সিবিআই তদন্তেরও নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ থাকেই৷ কয়েক বছর আগে কয়লা কেলেঙ্কারী তদন্তে...সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই কেন্দ্রীয় সরকারের ‘খাঁচায় পোষা তোতাপাখি’৷ আসলে নিরপেক্ষ তদন্তের পরিবর্তে এই সংস্থাটি কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন সরকারের কাছে বিরোধীদের ও জোট শরিকদের বা অন্য কোনো সংস্থা বা দলকে বশে রাখার যে একটা হাতিয়ার মাত্র তাতে কোন সন্দেহ নেই৷ সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্যে এটাই সত্য প্রমাণিত৷ সেদিন কয়লা কেলেঙ্কারী নিয়ে সিবিআই যে তদন্ত রিপোর্ট তৈরী করেছিল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পরামর্শক্রমে ওই রিপোর্টের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাদ দিয়েই তা সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা হয়েছিল৷ যদিও কয়লা কেলেঙ্কারী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ৷ অথচ সেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের পছন্দমত রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা হয়েছিল৷ এই পরিপ্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় বিচারপতি সিবিআই–এর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ণ তুলেছেন৷

২০০৭ সালে সিবিআই উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির প্রধান মুলায়ম সিং যাদবের বিরুদ্ধে তাঁর ন্যায়সঙ্গত আয়ের সঙ্গে সম্পত্তির সঙ্গতিহীনতা নিয়ে মামলা করে৷ সিবিআই জানায়, তাদের কাছে নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রমাণ আছে৷ তারপর ২০০৮ সালের জুলাই মাসে পরমাণু চুক্তিকে কেন্দ্র করে বামপন্থীরা ইয়ূপিএ সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলে মুলায়ম সিং–এর পার্টি সমর্থন দিয়ে মনমোহন সিংয়ের পতন রোধ করেছিল৷ এরপর থেকে জানানো হ’ল, মুলায়ম সিংয়ের বিরুদ্ধে বৈধ আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পত্তি নেই৷ অর্থাৎ সিবিআই ১৮০০ ঘুরে গেল৷ হঠাৎ কীভাবে এটা সম্ভব হ’ল? স্পষ্টতঃই বোঝা যায় কেন্দ্রীয় সরকারের ইঙ্গিতেই সিবিআই–এর এই বয়ানের পরিবর্তন৷

এই ধরনের ভুরি ভুরি তথ্য দিয়ে বলা যায় যে যখন কেন্দ্রে শাসন ক্ষমতায় থাকে সেই দলই নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির কাজে সিবিআইকে ব্যবহার করে৷

আর শুধু কেন্দ্রের কথাই বা কেন, রাজ্যের সরকারগুলিও রাজ্যের পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগকে এইভাবেই বিরোধীদের শায়েস্তা করবার কাজে লাগায়৷ তাই রাজনৈতিক দলগুলির ভ্রষ্ঠাচারী রাজনীতির ফাঁদে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভিত নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে৷ নীতিহীন রাজনীতি রাষ্ট্রের নাগরিককে ন্যায়–বিচার থেকে বঞ্চিত করছে৷

ঠিক এই কারণেই প্রাউট –প্রবক্তা শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার ও তাঁর সংস্থার বিরুদ্ধে নানান মিথ্যা অভিযোগ এনে নানান ভাবে অত্যাচার চালিয়েছে কেন্দ্রের সি.বি.আই৷ কারণ, হ’ল শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের প্রাউট পুঁজিবাদের উচ্ছেদ চায়৷ পুঁজিবাদের তল্পীবাহক সরকার তাই পুঁজিপতি গোষ্ঠীর ইঙ্গিতে প্রাউট–প্রবক্তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল৷ প্রাউট শুধু পুঁজিবাদের বিরোধী তা নয়, প্রাউট জড়বাদী মার্কসবাদেরও বিরোধী আর পুঁজিবাদ ও মার্কসবাদের বিকল্প হিসেবে অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের পথ দেখাচ্ছে ও সর্বত্র এই আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিচ্ছে৷ এই কারণে প্রাউটের অভ্যুত্থানে মার্কস্বাদীরাও তাদের মৃত্যুর ঘণ্টাধ্বনি শুণতে পায়৷ আর তাই পার্টির ক্যাডারদের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ও সি আই ডিকেও তাদের হার্মাদ বাহিনীর সহযোগী হিসেবে প্রাউটিষ্টদের বিরুদ্ধে তথা প্রাউট–প্রবক্তার প্রতিষ্ঠিত ধর্মীয় ও সমাজসেবামূলক সংস্থা আনন্দমার্গের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়৷

এইভাবে দেখা যাচ্ছে হাতে ক্ষমতা পেলে সেই ক্ষমতা অপব্যবহার করে নিজেদের ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করা ও ক্ষমতার সাহায্যে জনগণকে লুঠ করে’ নামে বেনামে ব্যষ্টিগত সম্পদ বৃদ্ধি করাই আজকের বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতা–নেত্রীদের ধ্যান–জ্ঞান হয়ে দাঁড়িয়েছে৷  এই কারণে প্রাউট–প্রবক্তা স্পষ্টভাবে বলেছেন, যাঁরা সদ্বিপ্র নন অর্থাৎ যাঁরা দৃঢ়ভাবে নীতিবাদে প্রতিষ্ঠিত নন জনগণের প্রতিনিধিত্ব করাব তাদের কোনো অধিকার নেই৷