মানব এক বহমান নদী

সংবাদদাতা
জিজ্ঞাসু
সময়

যে নদীর সাক্ষী সে নিজে, তার ‘আমি’ বোধ৷ বহু কাল পূর্বে গ্রীক দার্শনিক হেরাক্লিটাস এর বিখ্যাত উক্তি, তুমি এক নদীতে দুর্বার নাইতে পার না : কারণ প্রতি ক্ষণে বহমান নদী স্থান বদলায়, যে জল তোমাকে এক লহমায় ছুঁয়ে গেল, চিরতরেই গেল, কোনদিন সেই ছঁুয়ে যাওয়া জলকে তুমি ফিরে পাবে না৷ নদী থাকবে, জল তরঙ্গও থাকবে কিন্তু অতীতের সেই জলকণা যারা তোমাকে ছঁুয়ে গেছিল, তারাতখন হারিয়ে গেছে৷ আছে শুধু নোতুন নদীর নোতুন জল, এক নিমেষের  জন্য৷ আধুনিক দেহবিজ্ঞান মতে  দেহ, মন ও অন্তর নদীর মতই বহমান৷ কিছু আগে যা ছিলনা, এখন তো আছে, আবার এখন যা আছে অল্প  পরে তা থাকবে না৷ কিন্তু কোন স্থান তো শূন্য থাকবে না, অন্য কিছু  সেই শূন্যস্থানে এসে যাবে যদিও স্থায়ী কেউ নয়৷ বিজ্ঞানীরা মানব দেহের কোষস্তরের নিরন্তর জন্ম মৃত্যু ..... আবার জন্ম..... যেন নদীর বহমানতার মত সত্য, তা উপলব্ধি করেছেন৷ তাঁদের মতে মানবদেহের হাড়ের কাঠামোটি প্রতি তিন মাসে, সময়ের পরিবর্তনের সাথে বদলে যাচ্ছে৷ তেমনি চামড়ার বদল হতে সময় লাগে একমাসের মত৷ পাকস্থলীর ভেতরের দেয়াল প্রতি চারদিনে নব জন্ম নিতে বাধ্য৷ খাদ্যনালীর ভেতর জীর্ণ খাদ্য কণার প্রত্যক্ষ স্পর্শে থাকা দেহকোষ প্রতি পাঁচ মিনিটে মারা গিয়ে ও তারপর আবার নোতুন রূপে ফিরে আসে বলেই দেহের স্বাস্থ্য রক্ষা সম্ভব হয়৷ আমাদের লিভার যন্ত্রটি বদলাতে কমবেশী ছ সপ্তাহ সময় নেয়৷ মানব দেহে কোষেদের এই আসা-যাওয়া বা জন্ম-মৃত্যুর কারণেই সাত বছরের দেহটি সাতাশ বা সাতাত্তরে আমূল পাল্টে যায়৷ বিস্ময়ের কথা, দেহ পাল্টায়, মন বদলায় কিন্তু ‘সাক্ষী আমি’ বদলায় না৷ তেমনি এ জগতের সব কিছু বদলে যায়, কিন্তু এই জগতের পরম সাক্ষীসত্তা supreme cognitive principle)---ভূমা চৈতন্য অপরিবর্তিত থেকে যায়৷