প্রভাতী

গল্পের গল্পকথা

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

অনেকে ভাবে ‘গল্পষৰ’ বুঝি একটি সংস্কৃত শব্দ৷ না, এটি একটি গৃহীত সংস্কৃত শব্দ অর্থাৎ যে শব্দ মূলতঃ সংস্কৃত নয়, অন্য ভাষা থেকে নেওয়া হয়েছে যেমন ‘গুবাক’, ‘রজ্জু’, পান অর্থে ‘পর্ণ’, মাছ অর্থে ‘মীন’, গ্রাম অর্থে ‘পল্লী’---এরা সবাই গৃহীত সংস্কৃত৷ ‘গল্প’ শব্দটি তাই-ই৷ গল্প / গল্পিকা দুটোই গৃহীত শব্দ৷ সংস্কৃতে এরকম গৃহীত শব্দগুলির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হ’ল এদের ব্যুৎপত্তি পাওয়া যায় না৷

গল্পের সংস্কৃত হচ্ছে ‘কথা’ আর ছোট গল্পের সংস্কৃত হয় ‘কথানিকা’ (কথানিকা< কহানিয়া< কহানি< কাহিনী)৷ হ্যাঁ, ‘গল্প’, ‘গল্পিকা’ শব্দগুলি সংস্কৃতে আদিমকালে ছিল না, গৃহীত হয়েছিল সম্ভবতঃ বাংলা বা মৈথিলী থেকে কারণ ওই দুটি ভাষাতেই ‘গল্প’ বা ‘গপ্প’ শব্দ চলে যার উর্দু হচ্ছে ‘কিস্‌সা’৷ বাঙলায় কেউ কেউ ওই ‘কিস্‌সা’ থেকে ‘কেচ্ছা’ শব্দ তৈরী করে নিয়েছেন৷ ‘কেচ্ছা’ শব্দের আর একটি অর্থ হ’ল নিন্দা বা ‘কুৎসা’৷ এখানে ‘কেচ্ছা’ শব্দটি সংস্কৃত কুৎসা শব্দ থেকে আসছে না....আসছে উর্দূ ‘কিস্‌সা’ শব্দ থেকে৷ উর্দুতে যদি বলি ‘মতিবিবি কি কিস্‌সা’৷ তার বাংলা হবে ‘মতিবিবির কেচ্ছা’৷ এই কিস্‌সা শব্দের হিন্দী ভাষার তদ্ভব রূপ হচ্ছে ‘কহানী’, বাংলায় তদ্ভব রূপ ‘কাহিনী’ অর্থাৎ হিন্দীতে হবে ‘মতিবিবি কী কহানী’, বাংলায় হবে ‘মতিবিবির কাহিনী’৷ শোনা যায় একবার নাকি মিথিলার কমতৌলে বা সৌরাষ্ট্রের সভাগাছিতে অর্থাৎ নবদ্বীপের পোড়ামাতলায় অথবা ভাটপাড়ায় গঙ্গার ধারে কিংবা কোটালীপাড়ার বটতলায় অথবা কাঁথির কাছে জুনপুটের সমুদ্রতীরে কিংবা কোচবিহারের রাসময়দানে অথবা হাসিশহরের (পণ্ডিতী নাম ‘কুমারহট্ট’) ইট-বেরিয়ে যাওয়া গঙ্গার ঘাটে পণ্ডিতেরা সবাই জড় হয়েছিলেন৷ ‘গল্প’ শব্দটির ইতিহাস আবিষ্কার করতে৷ তাঁদেরজন্যে রাজারাজড়াদের এমন কিছু খরচ করতে হয়নি---আনতে হয়েছিল এক শ’ মণ চা আর পাঁচ শ’ মণ নস্যি৷ পণ্ডিতেরা তিন দিন তিন রাত এই নিয়ে তর্ক করেছিলেন, চর্চা করেছিলেন, শুরু হয়েছিল সেই তৈলাধার পাত্র বা পাত্রাধার তৈল নিয়ে গবেষণা৷ তারপর এল ‘তাল্‌ পড়িয়া চ ঢপ্‌ শব্দ হইল, না ঢপ্‌ শব্দ হইয়া তরু হইতে তাল্‌ পড়িল’! অবশেষে এল তামাকের গুণাগুণ৷ পণ্ডিতেরা এ সম্বন্ধে সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেলেন ধোঁয়ারূপেই হোক অথবা চূর্ণ রূপেই হোক (দোক্তা বা জর্দা বা নস্যি) তামাক সেবন মহা ফলদায়ী৷ সংস্কৃতে তামাকের নাম ছিল না৷ পণ্ডিতেরা গবেষণা করে নাম দিলেন ‘তাম্রকূট’৷ কিন্তু কিছু পণ্ডিত বলেছিলেন নাম রাখা হোক ‘স্বর্ণকূট’৷ কিন্তু অন্যরা বললেন, হৈমবতী উমা অর্থাৎ পার্বতীর সঙ্গে নামটি যুক্ত৷ তাই এটি চলবে না৷ কেউ কেউ নাম রাখতে চাইলেন ‘রজতকূট’ অন্যে আপত্তি করে বললেন---না, তাও চলবে না কারণ শিবের ধ্যান মন্ত্রে আছে---‘ধ্যায়েন্নিত্যং রজতগিরিনিভম্‌ সুতরাং সে নামও চলবে না৷ তা নিয়ে দেবতাদের মধ্যে মতভেদ নেই৷ তাই নাম রাখা হ’ল ‘তাম্রকূট’৷ কথ্য ভাষায় লোকে নাম রাখতে পারে টোবাকু, তাম্বাকু, তামাকু, তাংকু, তাতে ব্যকরণ সমর্থন করুক বা না করুক৷ ‘যার সঙ্গে যার মজে মন / কিবা হাঁড়ি কিবা ডোম৷ তাঁরা সিদ্ধান্তে পৌঁছুলেন---

‘‘তাম্রকূটং মহদদ্রব্যং শ্রদ্ধয়া দীয়তে যদি৷

অশ্বমেধসমপুণ্যং টানে টানে ভবিষ্যতি৷’’

অর্থাৎ তামাকু একটি মহৎদ্রব্য৷ কেউ যদি শ্রদ্ধার সঙ্গে কাউকে তামাক অফার করে তাহলে প্রাপক যেমন এক-একটা টান দেবেন দাতা তেমনি এক-একটি করে অশ্বমেধ যজ্ঞের সমান ফল পেতে থাকবেন৷

সবই তো হয়ে গেল৷ এবার পণ্ডিতেরা এলেন আসল বিষয়ে৷ অনেক গবেষণার পর ওঁরা বললেন ঃ তিন বন্ধু ছিল---গণেশ, ললিত, পরেশ৷ ওরা একবার বক্সীর হাট থেকে বেড়িয়ে তোর্সা নদী পার হয়ে যাচ্ছিল মাথাভাঙ্গা গণেশ লম্বা চেলে সে গরমকালে তোর্সা নদীর কোমড় জল পার হয়ে গেল৷ পরেশ আরো লম্বা৷ গরমকালে তোর্সা নদী তারকাছে হাঁটু জলের সামিল৷ কিন্তু ললিত বেঁটেখাটো৷ তাকে বলা হ’ল তুই নদী পার হতে পারবি?

ও বললে---মুই পরিম না৷

তখন পরেশ ওকে নিজের কাঁধের ওপর বসিয়ে নিল৷ এখন পণ্ডিতেরা মানস দৃষ্টিতে ওই ছবিটা দেখে নিলেন ঃ তোর্সা নদীর মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে আছে গণেশ আর নামের প্রথম অক্ষর ‘গ’৷ আর একটু পেছনে দাঁড়িয়ে আছে পরেশ যার নামের অক্ষর ‘প’৷ আর পরেশের কাঁধে রয়েছে ললিত যার নামের প্রথম অক্ষর ‘ল’৷ সবার আগে ‘গ’, পেছনে ‘প’ অক্ষর তার মাথার ওপরে ‘ল’৷ এই হ’ল ‘গল্প’ এর ইতিহাস....নবতর পুরাণ৷     (শব্দচয়নিকা ২১/১০৭)

‘‘চক্রং ভ্রমতি মস্তকে’’

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

মনে পড়ে গেল একটা ইতিহাসপ্রসিদ্ধ আখ্যায়িকা৷ গ্রামের নাম কুড়িয়ে–খাওয়া৷ সেখানকার সুপ্রসিদ্ধ মানুষ ছিলেন শ্রীযুক্ত ৰাৰু কিপ্ঢেকঞ্জুস কর৷ কিপ্ঢেকঞ্জুস বৈধ অবৈধ নানান ভাবে টাকা রোজগার করত৷ সে ভেবে দেখলে, হঠাৎ–ৰড়লোক হতে গেলে শিব ঠাকুরের কাছ থেকে ৰরদান নিতে হবে৷ অন্য দেবতাদের সন্তুষ্টির জন্যে কঠোর তপস্যার প্রয়োজন৷ কিন্তু শিব তো ভোলানাথ .....আশুতোষ৷ একটা আকন্দ ফুল আর কয়েকটা ৰেলপাতা দিলেই সন্তুষ্ট হয়ে যান৷ তাই তাঁকেই ডাকি৷

কিপ্ঢেকঞ্জুসের জানা ছিল শিবের দয়ার শরীর৷ দানব–রাক্ষসেরা শিবের কাছ থেকে ৰর দান পেত৷ কিপ্ঢেকঞ্জুস শিবের তপস্যায় বসে গেল৷ অল্প দিনের তপস্যায় শিব সন্তুষ্ট হয়ে তার সামনে এসে দাঁড়ালেন৷ বললেন–‘‘চোখ খুলে চা ৰেটা, আমি এসেছি৷’’

কিপ্ঢেকঞ্জুস বললে–‘‘এসেছো যখন ঠাকুর, আমার মনস্কামনা পূর্ণ করো৷’’

শিব বললেন–‘‘কী তোর মনস্কামনা তুই আমাকে চাস, না আমার কাছ থেকে আর কিছু চাস’’

তখন কিপ্ঢেকঞ্জুস বললে–‘‘তুমি তো ছাইমাখা ভিখিরি৷ তোমাকে নিয়ে আমার লাভ কী! তুমি আমার ৰোঝা হয়ে দাঁড়াবে৷ তুমি বরং আমাকে ৰর দান করো যাতে দু’পয়সার মুখ দেখতে পাই৷’’

শিব বললেন–‘‘এই মাত্র বললি, আমি ছাইমাখা ভিখিরি৷ আবার আমার কাছ থেকে টাকা পয়সা চাইছিস কোন যুক্তিতে’’

কিপ্ঢেকঞ্জুস বললে–‘‘তুমি যে ছাইমাখা ভিখিরি একথা তো ঠিকই ৷ কিন্তু দুপুরৰেলায় হৰিষ্যি করার পর ধনৈশ্বর্যের দেবতা কুবের এসে তোমাকে ম্যাসাজ (হাত–পা টিপে দেওয়া) করে দিয়ে যায়৷ ম্যাসাজ করতে করতে কুবের যখন তোমাকে বলবে–‘ঠাকুর, এবার ডানপাশ ফিরে শোও, সেই ফাঁকতালে তুমি বলে দিও, কুবের কিপ্ঢেকঞ্জুসের দিকে মুখ তুলে চা৷ ওকে কিছু পাইয়ে দে৷’’

শিবঠাকুর বললেন–কুবের যদি আমার কথা না রাখে......

কিপ্ঢেকঞ্জুস বললে–‘‘ত্রিভুবনে কার ঘাড়ে ক’টা মাথা আছে যে তোমার কথা ঠেলতে পারে৷ কুবের তোমার কথা শুনৰেই শুনৰে৷’’

শিব বললেন–‘‘আমি কুবেরকে বলে দোৰ৷ আর কুবের যা বলৰে তোকে জানাৰ৷’’

কিপ্ঢেকঞ্জুস বললে–‘‘ঠাকুর ৰেশ কিছুদিন ধরে তপস্যা করে আজ তোমার ইন্টারভিউ পেয়েছি৷ আবার দ্বিতীয়বার ইন্টারভিউ পেতে গেলে অনেকদিন তপস্যা করতে হবে৷ এদিকে আমাদের দোকানের কেনাৰেচা লাটে উঠতে বসেছে৷ কুবেরের কী উত্তর হবে তা অনুমান করে নিয়ে তুমি আগাম বলে দাও আমাকে কী করতে হবে৷’’

শিব বললেন–‘‘আহাহা! ৰেচারা ৰারবার কেনই বা আমার জন্যে তপস্যা করবে! আহাহা বেচারা ......... মোহগ্রস্ত ৰেচারা!’’

শিব কিপ্ঢেকঞ্জুসকে বললেন–‘‘ওই যে দিগন্তবিস্তৃত অরণ্যানী*১ তুই নাকের সোজা ওর ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলতে থাক৷ কথাটা আমি কুবেরকে জানাব৷ সে দরকারমত ব্যবস্থা করবে৷’’

কিপ্ঢেকঞ্জুস এগিয়ে চলল..........এগিয়ে চলল তার অশেষ গতিতে৷ গাছপালা সে দেখছে না...........গাছপালা নিয়ে গবেষণা করতে সে আসেনি৷ পশুপক্ষীর জীবন–চর্যার দিকেও সে তাকাচ্ছে না কারণ তাদের নিয়ে মাথা ঘামাবার সময় তার নেই৷ সে কি শিবঠাকুরের কথা ভাবছে না না না! শিবঠাকুর তখন তার কাছে পর্দার আড়ালে সরে যাওয়া জিনিস৷ সেকি কুবেরের কথা ভাৰছে–না, তাও নয়৷ সে ভাবছে কুবেরের ধন–সম্পদের কথা৷

কিপ্ঢেকঞ্জুস এগিয়ে চলেছে৷ তার বাঘের ভয় নেই......সাপের ভয় নেই........জল থেকে উঠে–আসা কুমীরের ভয় নেই৷ ধনসম্পদের মোহে সে আচ্ছন্ন৷ মোহের চশমায় তার দৃষ্টি অস্পষ্ট হয়ে গেছে৷ কে কী বলবে, কে কী ভাববে, তা ভাবার অবসর তার নেই৷ সে চলেছে......সে চলেছে.........অর্থগৃধ্ণুতার চরমত্বের দিকে৷ হঠাৎ কী যেন একটা দেখে কিপ্ঢেকঞ্জুস থমকে দাঁড়াল৷

সে তার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না.....সামনে কড়ির*২ পাহাড়..........ডাইনে কড়ির পর্বত........ বাঁয়ে কড়ির টিলা........পেছনে কড়ির ঢ়িবি৷ সে জয় ঘোষণা করলে কিন্তু কার জয় শিবের জয় নয়......কুবেরের জয় নয়......কড়ির জয়! পরক্ষণেই সে ভাবলে–কড়ির আর দাম কতটুকু! সঙ্গে তো তার রয়েছে ছটা পকেট–কোটের চারটে পকেট আর প্যান্টের দুটো পকেট, ছটা পকেট–ভরতি কড়ি নিলেও তার দাম এমন কিছু হবে না৷কিপ্ঢেকঞ্জুস কড়িকে খারিজ করে এগিয়ে চলল৷

*১      ৰৃহৎ অরণ্য এই অর্থে অরণ্যানী৷ ৰৃহৎ হিম অর্থাৎ অনেকদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হিম এই অর্থে হিমানী৷ কিন্তু ৰৃহৎ যবন এই অর্থে ‘যবনানী’ নয়, ‘যবনানী’ মানে যবনের লিপি বা লেখা৷ ‘অরণ্যানী’ শব্দ শুদ্ধ হলেও ‘বনানী’ শব্দ শুদ্ধ নয়৷

*২      কড়ির জন্যে সংস্কৃতে অনেকগুলি শব্দ থাকলেও কটিকা ও ক্কথিকা–এই দুটো শব্দই ৰেশী প্রচলিত৷ প্রাচীনকালে হাটেৰাজারে লেনদেনে কড়িই ৰেশী চলত৷ তাম্রমূদ্রা অচল ছিল না৷ তবে ৰাজার–চালু তাম্রমুদ্রার সংখ্যা বা পরিমাণ ছিল কম৷ কড়ি তৈরীর জন্য টংকশালার (টাঁকশালার) দরকার পড়ে না৷ তাই লেনদেনে ছিল তারই অৰাধ ব্যবহার৷ খুব ৰেশী দামী জিনিসের লেনদেনে টংকক (টাকা) বা রৌপ্যকম্ (রূপেয়া) ব্যবহার করা হত৷ এই টংকক বা রৌপ্যকমের সঙ্গে সাধারণ মানুষের বিশেষ যোগাযোগ ছিল না৷ এমনকি সাধারণ মানুষ অনেক সময় কড়ির ব্যবহার না করে অদলবদল প্রথায় কাজ চালাত৷ এই ‘অদলবদল’ শব্দটি আমাদের ছোটৰেলায় রাঢ়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হত৷ ছোটৰেলাতে তাই দেখেছি এক কুনকে চালের বিনিময়ে শাক–মাছ–তরীতরকা নানান জিনিস কেনা চলত৷ বীরভূমের খয়রাসোল থানায় দেখেছি ছুতোর কাঠের পিলশুজ তৈরী করে হাটে বসে চালের বিনিময়ে তা ৰেচছে৷ আধুনিক যুগের ৰার্টার ব্যবসায় প্রথাও কতকটা এই ধরনের৷

তা যাই হোক রূপোর টাকার ব্যবহার খুবই অল্পই ছিল৷ মুদ্রা মানে সোনাই চলত৷ কিন্তু ৰাজারে সাধারণ লেনদেনে সোণা বা স্বর্ণমুদ্রার (সীনক) ব্যবহার ছিল না৷ সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে তাই কড়ি অচ্ছেদ্যভাবে জড়িত থাকত৷ আগেকার দিনে মেয়েরা যে লক্ষ্মীপুজো করতেন তাতে লক্ষ্মীর ঝাঁপিতে অবশ্যই কড়ি থাকত৷ আমাদের ছোটৰেলায় কোলকাতায় দেখতুম বিয়েতে ৰরণের সময় ৰরকে বলা হত ঃ

‘‘কড়ি দিয়ে কিনলুম, দড়ি দিয়ে ৰাঁধলুম,

হাতে দিলুম মাকু একবার ভ্যা কর তো ৰাপু৷’’

জানি না কোনো কোনো ৰোকা ৰর সত্যিসত্যিই ভ্যা করত কিনা৷ এখনও আমরা ব্যবহারের ভাষায় টাকাকড়ি, পয়সাকড়ি, মাইনেকড়ি বলে থাকি, যদিও কড়ি ৰড় একটা চোখে দেখি না৷

যেসব মায়েদের মৃতবৎসা রোগ ছিল তারা সন্তান যাতে না মরে সেইজন্যে ভূমিষ্ঠ হৰার সঙ্গে সঙ্গে সন্তানকে ধাইকে (দাই–প্পন্স্তুভ্রন্ন্দ্রন্দ্ব, সংস্কৃতে ‘ধাত্রী’) দান করত৷ তারপর যেন অন্যের ছেলেকে কিনছে এই রকম ভান করে সেই ধাইয়ের কাছ থেকে একটা কড়ি, তিনটে কড়ি, পাঁচটা কড়ি, সাতটা কড়ি বা ন’টা কড়ি দিয়ে কিনে নিত৷ আর সন্তানেরও নাম ঠিক তেমনি রাখা হত৷ সেকালে কড়ি নিয়ে বেচাকেনা চলত বলেই ছাত্রদের অঙ্ক শিখবার সময় কড়াক্রান্তি শিখতে হত৷

বাঙলা ভালো নাই

লেখক
সাক্ষীগোপাল দেব

ওপার বাংলা কেমন আছো?

এপার ভালো নাই,

ভায়ে ভায়ে বেশতো ছিলাম

(আজ) ভিন্ন ভিন্ন ঠাঁয়৷

বাংলা মায়ের কোল ছাড়া আজ

থাকি দূরে দূরে

কেন হলাম ছন্নছাড়া---

কেন গো ভবঘুরে৷

নদী, পাহাড় সবই ছিল

ছিল সাগর ঝর্ণা,

শস্য শ্যামলীমায় ভরা

মা ছিল সম্পূর্ণা৷

কোথায় গেল সে সব সুদিন

গোলাভরা ধান,

পুকুরভরা মাছের খেলা

বরজভরা পান৷

হায়রে কারা করল এমন

দেশের সর্বনাশ,

ঘর থাকতেও ঘর হারিয়ে

দেশান্তরে বাস৷

আর কতকাল রইবে ঘুমে

বাংলার সন্তান,

আমরা বাঙালী হোক পরিচয়

নই হিন্দু-মুসলমান৷

ফুল ফোটে তোমার তরে

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

কত শত কুঁড়ি ফুল হয়ে ফুটে

 কত ফুল যায় ঝরে,

ফুল ফুটে শুধু ঝরিবার তরে

 যা’ ছিল উজাড় করে৷

সৃষ্টিকর্তার অপরূপ সৃষ্টি

 সৃষ্ট সকল ফুল,

রূপে গুনে তার মুগ্দ জগত

 নাই তার সমতুল৷

কল্যাণকর কাজে নিয়োজিত

তোমার সেবায় হাসে দুর্গত,

তুষ্ট তারা, যারা নিপীড়িত

বিশ্ববিধাতা তাই এত প্রীত!

 যা’’ কিছু তোমার আছে বৈভব

 বিধির চরণে দিলে অকাতরে

এক শুভদিনে মাহেন্দ্রক্ষণে

ঠাঁই পরমপিতার স্নেহময় ক্রোরে,

 মানব জনম সার্থক করে!

সাজানো পৃথিবী মিলন মেলা

সবাই প্রিয়জন নয় অবহেলা,

 তাদের নিত্য গমনাগমন

জানিনা কখন কেঁদে ওঠে মন!

যাওয়া-আসা সেতো তাঁর অভিপ্রায়

 আছে স্নেহভরা প্রীতি,

কাছের মানুষ দূরে চলে যায়

 রেখে যায় শুধু স্মৃতি৷

 প্রতিদিন কত জনম মরন

 অশ্রু হাসি সকলই স্বাগত,

 যেটুকু সময় আছি এ জগতে

তাঁর সেবা কাজে যেন থাকি রত৷

গাজনের গপ্পো

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

শিব নাকি শ্রাবণ মাসে জন্মেছিলেন৷ আর বিয়ে করেছিলেন চৈত্র মাসের শেষের দিকে৷ বিয়ে হয়েছিল নীল চণ্ডিকার সঙ্গে৷ তাই চৈত্রমাসের শেষে হিন্দু নারীরা নীলের উপোস করে৷ আর তার সঙ্গে গাজন উৎসব শুরু হয়৷ শিবের বিয়ে উপলক্ষে সন্ন্যাসীরা ছিলেন বরযাত্রী৷ বরযাত্রীরা মাঝে মাঝে গর্জন করতেন৷ সেই গর্জন থেকে ‘গাজন’ শব্দের উৎপত্তি৷

না, শিবের বিয়ে নীল চণ্ডিকার সঙ্গে হয়নি৷ শিবের বিয়ে প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি বলেছেন---‘সেকালে বহু বিবাহের প্রচলন ছিল৷ শিবেরও তিন স্ত্রী ছিলেন৷ আর্যকন্যা পার্বতী, অনার্য কন্যা কালী, আর মঙ্গোলীয় কন্যা গঙ্গা৷’ (তন্ত্রই সাধনা সাধনাই তন্ত্র)

কেউ কেউ বলেন, গাজনের শেষ দিনে হয় চড়ক৷ মাটিতে চড়কের গাছ পুঁতে তার মাথায় আড়ভাবে একটা বাঁশ এমনভাবে বাঁধা হয় যাতে পাক খাওয়া যায়৷ আগে সন্ন্যাসীরা পিঠে লোহার বড় বড়শি বিঁধিয়ে বাঁশের শেষ অংশ থেকে ঝুলে পাক খেতো৷ এই নৃশংস প্রথাটিকে ইংরেজ সরকার ১৮৬৫ সালের ১৫ই মার্চ আইন করে বন্ধ করে দেন৷ তখন থেকে সন্ন্যাসীরা বুকে গামছা বা কাপড় বেঁধে চড়ক গাছে ঘুরপাক খেতে আরম্ভ করেন৷ চড়ক গাছটি হওয়া চাই শক্ত৷ নচেৎ ভেঙে পড়তে পারে৷ তাই শাল বা গজারি ব গর্জন গাছের একটি খুঁটি বছর খানেক পুকুরের জলে ডুবিয়ে রাখা হয়৷ গাজনের আগের দিন ভক্তরা সেই খুঁটি জল থেকে তুলে বেশ করে তেল মাখিয়ে মাটিতে পোঁতে৷ একে বলে গাছ জাগানো৷ এই গর্জন গাছের সাহায্যে অনুষ্ঠান হয় বলেই হয়তো উৎসবের নাম গাজন৷

আবার বর্তমানকালের পণ্ডিতগণ বলেন, সার্বজনীন ভাবনা থেকে গাজন শব্দের উৎপত্তি৷ গ্রামের সকলে মিলে এই উৎসবে অংশগ্রহণ করতো বলে এই উৎসবের নাম গাজন৷ গ্রাম+ জন= গা+ জন= গাজন৷

এ প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি বলেছেন ---‘অন্ততঃ একদিন প্রাণভরে চীৎকার করে শিবের নামে গর্জন করি, ‘শিব হে’ বলে মানুষকে আহ্বান করি৷ গর্জন> প্রাকৃতে গজ্জন> বর্তমান বাংলায় ‘গাজন’৷             (নমঃ শিবায় শান্তায়)৷

নববর্ষের শপথ

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

শুধু আত্ম মোক্ষ নয়কো কাম্য

ভেদাভেদ হীন সমাজে সাম্য

 গড়িতে এসেছি আজ,

জগদহিতার্থে যাহা করণীয়

মরন সেথায় হোক বরণীয়

 রণং দেহি সাজ!

আর ঘুম নয়, হোক জাগরণ

স্থিতিশীল হয় যেন আমরন

পূব দিগন্তে নবীন সূর্যোদয়,

 সুষ্ঠু সমাজ গড়িবার দায়

 সৎ মানুষের পর বর্তায়

মাথার উপর স্রষ্টার বরাভয়৷

শোষন মূক্ত মানব সমাজ

ভ্রাতৃপ্রীতির স্থায়ী বিরাজ

 অনুশাসনের ধারাগুলি

 পায় যেন মান্যতা,

কোমলে কঠোরে হৃদয়ে সুপ্ত

 মানবিক উদারতা!

বুদ্ধির জগতে বোধির জগতে

 মানুষ শ্রেষ্ঠ জীব,

দুঃসাহসের ইতিহাস বলে

 ছিল না মানুষ ক্লীব৷

নিঠুর মরন চোখ রাঙিয়ে

 মোর পানে যদি ধায়,

তবু কৃতজ্ঞ চিত্তে বীরত্ব স্মরণ

 বিনম্র শ্রদ্ধায়!

শত শহীদের উত্তর শাখায়

 ভরে আছে এ ভূবন,

তুমি কি জাননা তব শোণিত

ধারায় সুপ্ত সংগামী মন!

নিজ পৌরুষ জাগরণে হোক

 বিপ্লবের শুভ বোধন,

নিজ অধিকার বুঝে নিতে

 হতে হবে সচেতন৷

কায়েমী স্বার্থ সিদ্ধির তরে

 পুঁজিবাদী চক্রান্ত,

ভেদবুদ্ধির প্রাচীর ভাঙ্গিয়া

 হও সমুখে অতিক্রান্ত৷

পরমপিতার আশীষ মাথায়

 নববর্ষের শপথ,

সার্বজনীন কল্যান কাজে

 নিয়োজিত জনপদ৷

নব্যমানবতাবাদকে স্বাগত জানায়

 নববর্ষের নবারুণ,

বিশ্বসমাজ দেখিবার লাগি

 নিশীথে তারার নাই ঘুম৷

মানব সমাজ, তরুলতা,

 প্রাণীদের প্রতি দায়,

নব্যমানবতা রূপায়ণ

 মানুষের পর বর্তায়৷

নব অভিযান

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

বিষাক্ত কন্টকপথে পণ করে’ প্রাণ

শুরু হলো আমাদের নব অভিযান৷

মান নেই, খ্যাতি নেই,

নেই সমর্থন---আছে জ্বালা,

আছে ব্যঙ্গ ---সহস্র বন্ধন৷

শুভ কাজে যত শুনি তিক্ত অপবাদ

অট্ট হেসে তত পাই রোমাঞ্চের স্বাদ!

ড্রাগনেরা ঘিরে আছে প্রগতির পথ

সংগ্রামে প্রস্তুত আছি---নিলাম শপথ৷

জীবন-সংকটে কভু হটবোনা পিছে,

পেয়েছি অভ্রান্ত পথ মৃত্যুভয় মিছে!

মাঝপথে যদি নামে দুর্র্যেগের রাতি,

যদি ওঠে ক্ষুব্ধ ঝঞ্ঝা নাহি রয় সাথী

আমাদের অভিযান থামবে না তবু---

তিলে তিলে দেবো প্রাণ

দমবো না কভু৷৷

সুকুমার রায়ের কবিতা

 

(১)

চালায় যারা হিংসার পাঠশালা

শিখছে তারা সদাই বিদ্বেষের পালা৷

গড়ছে যারা মনমানি বিধান

জানেনা দিতে মানবতার মান৷

বর্বর অবোধের ভ্রান্ত পথ চলা

সৃষ্টির বুকে করে হিংসার খেলা৷

অধর্মের সে কোন উন্মাদি কলাকার

জানে না সমাজে শান্তি শিষ্টাচার৷

(২)

প্রভু মহাকালের যাত্রা তোমার

কেউ জানে না এ অনন্ত লীলার সার৷

সুখে দুঃখে রাত্রি দিনে আছো সবার সনে

বিশ্বভুবনে খেলিছো তোমারই ভূমামনে৷

সৃষ্টিস্থিতি লয় নিয়ে নাচ চিরকাল

তোমার মনেই বিধৃত ইহকাল পরকাল৷

(৩)

এসো হে প্রভু এসো এ শূন্য হৃদয়

একা একা থাকবে কত নিরাধারে লুকিয়ে৷

এসো হে অমৃতলোকের আনন্দ নিয়ে

প্রীতিমাখা ছন্দে দাও হে পরশ দিয়ে৷

আর থেকো না ওগো গোপনে গহনে

আশা ভরা মনে বসে আছি পথ পানে৷

প্রিয়তম তুমি মোর

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

থাকো অবিকার নয় নিরাকার

উপলব্ধিতে তোমাকে চাই,

পঞ্চেন্দ্রিয়র ঊর্দ্ধলোকেতে

কৃপা করে লহ হৃদয়ে ঠাঁই৷

 

নিত্য নূতন তুমি সনাতন

অপরিণামদর্শী তোমাকে মানি,

অনু থেকে ধরা পরিচালনায়

অলক্ষ্যে রত তাহাও জানি৷

 

সব কাজে আছো ধরায় বিরাজো

সে’ কথা কাহারো অজানা নয়,

ছাড়িতে চাহিলে ছেড়ে নাহি যাও

 তবে কেন পাই অযথা ভয়!

 

রয়েছো আমার আবেগ উদ্বেগে

 শত ভাবনার মধ্য মনি,

হাসি-ক্রন্দনে প্রেম-বন্ধনে

অন্ধ বিবরে হীরকের খনি!

 

শত সমস্যা যবে বোঝা হয়

পাহাড়-প্রমাণ অচলায়তন,

তব কৃপা কণা অপার করুণা

সহজ সমাধানে করিয়া যতন৷

 

না বলে এসেছো অচেনা অতিথি

ভাবে-অভাবে ঢালো প্রেম-প্রীতি,

বিশুষ্ক মনে ঢেলে দিলে গীতি

 কোন জনমের পূণ্য ফলে!

এসেছো যখন থাকো কিছুক্ষণ

পথের নিশানা যাওগো বলে৷

 

এত ভাব দিলে এত ভাষা দিলে

 এত সুর এত গান

যে গান শ্রবণে ভরে মন-প্রাণ

 আলোড়িত ধরাধাম!

 

ছিনু নিদ্রামগ্ণ তন্দ্রাচ্ছন্ন

 জড়তা জড়ানো সুপ্তিতে,

ভরিল এমন আলোর প্লাবন

 ভাবালোকের দীপ্তিতে৷

 

অলোক ভূলোক গোলক জানিনা

 প্রতি পলে পলে তোমাকে চাই,

আলো ঢেলে দাও আঁধার ঘুঁচাও

 তোমার চরণে লইব ঠাঁই৷

পানের ৰরজ–বরোজ নয়

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

ৰাংলা ভাষায় ৰহুল–প্রচলিত ‘গরজ’ শব্দটি আসলে ফারসী মূলজাত৷ শব্দটি ‘গরজ’ নয়–‘গর্জ্’৷ তোমরা ৰাংলা উচ্চারণে ঢ়েলে একে ‘গরজ’ করে নিয়েছ, যেমন তৰলা ৰাজাতে গিয়ে দ্রুত লয়কে ‘জলদ’ করে দিয়েছে৷ শব্দটি ‘জলদ’ নয়–‘জল্দ্’৷ উর্দু ফারসীতে প্রচলিত ‘খুদগর্জী’ শব্দের সঙ্গে তোমরা কেউ কেউ হয়তো পরিচিতও৷ শব্দটি ‘খুদগরজী’ নয়–‘খুদগর্জী’৷

‘গরজ’ অশুদ্ধ....‘গর্জ্’ শুদ্ধ, কিন্তু তাই ৰলে ‘ৰরজ’ অশুদ্ধ–‘ৰরোজ’ শুদ্ধ এমনটা ভেবে বসো না৷ তবে ৰানানে ‘ৰরোজ’ না লিখে ‘ৰরজ’ লেখাই সঙ্গত, কারণ শব্দটির উদ্ভব হয়েছে ৰরূজনূড এই সূত্র থেকে৷ এ ব্যাপারে সেই মজার পৌরাণিক গল্পটা জান তো৷

পৌরাণিক গল্পে আছে, স্বর্গে নাকি সেকালে ঘৃতাচি নামে এক অপ্সরা ছিলেন৷ তিনি একলা থাকতেন না......সব সময় দোকলা থাকতেন–সঙ্গে থাকতেন তাঁর বোন ঘৃতকৌষিকী৷ অবিশ্যি কারো কারো মতে ঘৃতাচি/ ঘৃতকৌষিকী একজনেরই নাম৷ যেমন কারো বাড়ীর নাম খাঁদুরাণী, তিনিই আৰার সমাজে এসে হয়ে যান নামকরা চিত্রতারকা মিস্ আলেয়া আটা৷

যাই হোক্, সেই ঘৃতাচি নাকি একবার উড়তে উড়তে আমাদের হুগলী জেলার কোথাও কোন একটি হেলিপ্যাডে নেৰে পড়েছিলেন৷ সেখানে ছিল পেল্লায় ৰড় একটা হ্রদ বা ঝিল৷ লোকে শুভক্ষণে মন্ত্রীকে দিয়ে ফিতে কাটিয়ে হ্রদটির ভাল নাম রেখেছিল ঘৃতাচি হ্রদ–ডাক নাম খন্যানের জলা৷ স্থানটি নামাল৷ চারিপাশের যত জল সেই হ্রদে এসে পড়ত৷ পরবর্ত্তীকালে চারিপাশের বালি–মাটি, দামোদরের ৰালি–পলি পড়ে হ্রদটা কিছুটা ভরাট হয়ে গেছল৷ তবুও চারিপাশের জমি নিচু থেকেই যায়৷ এর ফলে চারিপাশের অঞ্চল থেকে বর্ষার জল এসে সেখানে জমে, যেমন জমে মেদিনীপুর জেলার ময়না থানায়, হুগলী জেলার ডানকুনির জলায়, হাওড়া জেলার কেন্দুয়ার (কেন্দোর) মাঠে৷ ধান এখানে মারা পড়ে না৷ এটি খন্যানের জলা নামে পরিচিত৷ সেকালে এই জলা থেকে বেরিয়ে এসেছিল একটি নদী–নামও অপ্সরার নামে রাখা হল ঘৃতাচি নদী......বর্ত্তমান নাম ঘিয়া নদী৷

রাঢ়ের মিষ্টি ভাত খেয়ে ঘৃতাচি অপ্সরার খুব ভাল লেগে গেল৷ সে ভাৰলে এৰার রাঢ়ের মাটিতে আঁচল বিছিয়ে একটু গড়িয়ে নেওয়া যাক্৷ ঘৃতাচির মনে পড়ল স্বর্গে সে ভাত খেয়ে পরে একটি পান খায় কিন্তু মর্ত্ত্যে পান কোত্থেকে পাৰে৷ কিন্তু ভাত খাবার পর পান না খেলে যে থাকাই যায় না৷ ৰর্দ্ধমান জেলার জনৈক অকুলন ৰিৰিকে ৰলতে শুনেছিলুম, ‘‘ভাত বিহনে যেমন তেমন/পান বিহনে মরি’’ অর্থাৎ স্বামীর ঘরে যদি ভাত না–ও জুটল, পানটি আমার চাই–ই৷ ঘৃতাচি অপ্সরা সেই সুরে সুর মিলিয়ে মনে মনে ৰিড়ৰিড় করে ৰলতে লাগল–

‘‘শোলক মোলক বাঁশের গজা

ভাতটি খেলে পেটটি সোজা

পানটি পেলে আরও মজা

পেট ৰলে মাগো

আমায় নিয়ে শো’ গো’’

যেমনি ভাবা তেমনি কাজ...দেবতা–প্সরাদের ব্যাপার কিনা! রাঢ়ের ওপর ঘৃতাচি ৰর বর্ষণ করলেন৷ স্বর্গ থেকে নেৰে এল একটি পানের ‘ৰরজ’ যার ছত্রছায়ায় গজিয়ে উঠেছে মিঠে পান, মগহী পান, ৰাংলা পান, ঢ়োলক পান, ছাঁচি পান, গাছ পান...আরও কত কী! ৰরজটি এসে ঠিক কোন জায়গায় পড়েছিল ৰলা মুশকিল৷ তবে এ ৰ্যাপারে পানচাষীদের মধ্যে মতভেদ আছে৷ কেউ ৰলে ওটি পড়েছিল রাঢ়ের তমলুকের কাছে, কেউ ৰলে মেদিনীপুরের মেচাদায়, কেউ ৰলে হাওড়া জেলার নুন্ঠিয়া–বাঁটুলে, কেউ ৰলে ২৪ পরগণা জেলার বারুইপুরে, কেউ বা ৰলে শ্রীরামপুর–চাতরার কাছে বারুইপাড়ায়, কেউ বা ৰলে হাওড়া–ৰর্দ্ধমান কর্ড–লাইনের বারুইপাড়ায়, কেউ বা ৰলে ৰেগমপুরে, আবার কারো মতে নদে’ জেলার চাকদা থানার শিমুর–আলিতে৷ যেখানেই পড়ে থাকুক না কেন, সেখানেই এক একটি পানের ৰরজ গজিয়ে উঠল৷ হ্যাঁ, ঘৃতাচি (ঘৃতাচি/ঘৃতাচী দুই ৰানানই চলৰে৷)

অপ্সরার ৰর থেকে যার জন্ম সে ‘ৰরজ’ – ‘ৰরোজ নয়’৷

এখন ৰুঝছ ‘ৰরজ’–এর মত শব্দ নয় ‘গরজ’–আসলে তা ‘গজ্’৷       (শঃ চঃ ২০/৬০)