সম্পাদকীয়

গণতন্ত্রের পাঠ

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার প্রাথমিক পাঠ হলো জনগণের জন্যে, জনগণের দ্বারা, জনগণের শাসন৷ কিন্তু স্বাধীনতার ৭৭বছর পরেও দেশের জনগণ ও দেশের নেতা মন্ত্রীরা গণতন্ত্রের এই প্রথম পাঠ বিষয়ে কতটা সচেতন! প্রথম কথা সার্থক গণতন্ত্রের প্রথম শর্তই হচ্ছে জনগণের সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক বিষয়ে সচেতনতা৷ কিন্তু আজও ভারতের ৮০ শতাংশ মানুষের এই চেতনা নাই৷ জনগণের অশিক্ষার সুযোগ নিয়ে জনগণকে নানা প্রলোভনে প্রভাবিত করে একবার ক্ষমতায় বসতে পারলেই প্রাগৈতিহাসিক সমাজ ব্যবস্থার---‘‘জোর যার মুল্লুক তার’’ পাশবিক নীতিকে আঁকড়ে ধরে৷

স্বাগত ১৪৩১

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

 আর একটা বছর বছর অতিক্রম করে এসে গেল বাঙ্লার শুভ নববর্ষ৷ বাংলা ১৪৩০ সাল পেরিয়ে আমরা ১৪৩১–এ পড়লুম৷ নোতুন বছরে পা দিলাম৷ এমনি এক বাংলা নববর্ষের প্রবচনে প্রাউট–প্রবক্তা পরম শ্রদ্ধেয় শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার যিনি একাধারে মহান দার্শনিক, ইতিহাসবিদ্, ভাষাতত্ত্ববিদ্, শিক্ষাবিদ্, সঙ্গীতকার, যিনি মহাসম্ভূতি শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী রূপে সমধিক পরিচিত, তিনি আত্মবিস্মৃত বাঙালী জাতি সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘বাঙালী নামধেয় জনগোষ্ঠী অতীতে জীবিত ছিল, আজও জীবিত ও আমি আশা করব, ভবিষ্যতে আরও দুর্দান্তভাবে জীবিত থাকবে৷ সেই জনগোষ্ঠীকে নোতুন করে শপথ নিতে হবে–এই নোতুন বছরটা তারা কীভাবে আরও সফল করে তুলবে৷ নিজেদের অস্তিত্বকে কী

গণতন্ত্রের ছিদ্রপথে ধনিকতন্ত্রের প্রবেশ

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

৭৫ বছর পার করেও ভারতীয় গণতন্ত্র সাবালোক হয়ে উঠলো না৷ গণতন্ত্রের প্রচলিত সংজ্ঞা অনুযায়ী শাসককে নির্বাচিত হতে হয় জনগণের দ্বারা৷ গণতন্ত্রের অর্থই জনগণের জন্যে, জনগণের দ্বারা, জনগণের শাসন৷ কিন্তু স্বাধীনতার ৭৭ বছর পূর্ণ করার প্রাক মূহুর্ত্তে আর্থিক বৈষম্যের যে চিত্র সামনে এসেছে তাতে স্পষ্ট শাসক নির্বাচনে জনগণের কিছুটা গৌণ ভূমিকা থাকলেও জনগণের জন্যেও নয়, জনগণের শাসনও নয়৷

চাই নতুন মানুষ নতুন আদর্শ

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

সব রাজনৈতিক নেতারাই তারস্বরে গণতন্ত্রের সুনাম করেন৷ রাজতন্ত্র, অভিজাত–তন্ত্র, একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে সরব নয়– এমন বোধ করি একজনও নেতা বা নেত্রী পাওয়া যাবে না৷ তবুও এ প্রশ্ণটা অত্যন্ত সঙ্গত যে– গণতন্ত্রকে কেউ কি মানে নির্বাচনের দামামা বাজতেই নেতাদের মুখের ভাষা, অঙ্গ ভঙ্গীমায় গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই৷ নির্বাচনী প্রচার মরণের উন্মাদরাগিনী৷ নির্বাচনে জিততে নেতারা জনসমর্থনের ওপর আর ভরসা রাখে না৷ পেশিবল, অর্থবল, প্রশাসনিক ক্ষমতাকে শাসকদলের অনুকুলে ব্যবহার করা ভারতীয় গণতন্ত্রের অঙ্গ হয়ে গেছে৷ জনগণতন্ত্রের শাসনে জনগণই গৌণ হয়ে গেছে৷

ধর্মের যথার্ত স্বরূপ

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

স্বাধীন ভারতের জন্মই ধর্মান্ধদের শাণিত কৃপানে দেশ ভাগের মধ্য দিয়ে৷ স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরেও দেশ সেই ধর্মান্ধদের হাত থেকে মুক্ত হলো না৷ বরং আজ মুর্খ কালিদাসের মত ধর্মান্ধদের শাণিত কৃপান হাতে খণ্ডিত ভারতের অখণ্ডতা রক্ষার আবাজ উঠছে শাসকের কন্ঠে৷ স্বাধীন দেশের বৃহত্তম জনগণ শিক্ষিত অশিক্ষিত সবাই ধর্মের প্রকৃত স্বরূপ না জেনে ধর্মমত নিয়ে হানাহনি করছে৷ সারা বিশ্বজুড়ে আজ যে সাম্প্রদায়িক জঙ্গিপনা–সাম্প্রদায়িক হানাহানি চলছে–এসবেরই পেছনে আছে এই ডগ্মা৷ ধর্মমতের নামে এই ধরনের অজস্র ডগ্মা মানবসমাজকে অজস্র অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার ও অমানবিক কাজকর্মের দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷ ধর্মমতের নামে বিভিন্ন জাত–পাত সম্প্রদায়গত

নিখাদ প্রতারনা

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার পর যে সব হিন্দু বাঙালী আশায় উৎফুল্ল হয়েছিল তাদের আশার গুড়ে যে বালি মেশান আছে সেটা টের পায়নি৷ এই সব গড়পড়তা বাঙালী আইনের খুঁটি-নাটি নিয়ে বিচারও করে না, খুঁটিয়ে দেখার মত দৃষ্টিও তাদের নেই৷ তারা শুধু নেতাদের ভাষন শুণেই আবেগে উদ্বেলিত হয়ে উঠে৷ বাস্তব নিয়ে ভাবার মত সময় ও সামর্থ্য তাদের নেই৷

নারী জাতি হোক নূতন বিপ্লবের অগ্রদূত

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

সমাজে নারী ও পুরুষ পাখীর দুটি ডানার মতো৷ একটা ডানা যদি পঙ্গু হয়, তা হলে একটিমাত্র ডানা দিয়ে পাখী উড়তে পারে না৷ ঠিক তেমনি সমাজে নারী যদি অবহেলিত হয়, শোষিত হয়, নির্যাতিত হয়, যা আজকে হচ্ছেও, এ অবস্থায় সমাজের প্রকৃত প্রগতি হতে পারে না৷ নারী পুরুষের জননী৷ এই সত্য মদগর্বী কিছু পুরুষ ভুলে যায় ও নারীর ওপর নির্যাতন চালায়৷

বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে, কিছু পশুস্বভাবযুক্ত পুরুষ যেভাবে মেয়েদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাচ্ছে তা মানব সভ্যতার মুখে চরমভাবে কালি লেপন করছে৷

নিপীড়িত মানবতার মুক্তির সংগ্রামে প্রেরণা দধীচি দিবস

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

পৃথিবীতে সবসময় কিছু মানুষ থাকে যারা সমাজে প্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়৷ তারা কখনই মানুষের সামূহিক কল্যাণ চায় না৷ বরং মানব সমাজকে অধোগতির দিকে টেনে নিয়ে যায়, কল্যাণের পথ রুদ্ধ করে দিতে চায়৷ এই ধরণের পাপশক্তির হাতে পড়ে মানবতা যখন চরম বেদনাদায়ক পরিস্থিতির শিকাব--- তখনই আর্তমানবতার পরিত্রান কর্তারূপে আবির্ভূত হলেন শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী, দিলেন এক সুসন্নিবদ্ধ সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার এক সর্বানুসূ্যত দর্শন---আনন্দমার্গ৷ কি ধর্ম, কি শিক্ষাব্যবস্থা, কি সামাজিক অর্থনৈতিক দর্শন, সর্বক্ষেত্রে তিনি মানুষকে আজকের সমস্ত সমস্যার সমাধানের জন্যে এক সর্বপ্রকার শোষণমুক্ত সর্র্বঙ্গ সুন্দর সমাজ রচনার এক মহান আদর

অর্থনৈতিক গণতন্ত্রই উন্নয়নের পথ

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

লোকসভার বাজেট ভাষণে অর্থমন্ত্রী দাবী করেছিলেন--- তাঁর সরকার মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন৷ এ কৃতিত্ত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের৷ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বড় গলায় বলেছিলেন দেশে এখন মূল্যবৃদ্ধি নেই৷

২১শে ফেব্রুয়ারী সমাজ আন্দোলনের প্রেরণা

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

২১শে ফেব্রুয়ারী বাঙলা ও বাঙালীর গৌরব৷ ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী ওপার বাঙলার বিশেষ করে ছাত্র, যুবসমাজ সমস্ত প্রকারের সংকীর্ণতার ঊধের্ব উঠে মাতৃভাষা বাংলার প্রতি ভালবাসার টানে যেভাবে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সমুদ্রের মত উত্তাল হয়ে উঠেছিল ও সমস্ত গোঁড়া ধর্মমত ও সাম্প্রদায়িকতার সমস্ত প্রাচীরকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল, ইতিহাসে তার তুলনা নেই৷ যুবজাগরণ সম্পর্কে কাজী নজরুল বলেছিলেন---

‘এই যৌবন জলতরঙ্গ রুধিবে কি দিয়া বালির বাঁধ

কে রোধিবে এই জোয়ারের জল গগনে যখন উঠেছে চাঁদ৷’