নোতুন কেন্দ্রীয় সরকার আনন্দমার্গের ১৭জন সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনী হত্যাকাণ্ডের সত্য উদঘাটনে ব্রতী হন

লেখক
প্রভাত খাঁ

সেই ১৯৮২ সালের ৩০ এপ্রিলের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তারিখটি গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এলো৷ আনন্দমার্গের সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী, সন্ন্যাসিনী ও গৃহী ভক্তবৃন্দ সেই বিজন সেতু ও বন্ডেল গেটে যে তরতাজা লাল গোলাপের মত সুন্দর ১৭ জন সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনী নৃশংসভাবে দিবালোকে কলকাতার রাজপথে নিহত হলেন তাঁদের বিদেহী আত্মাকে স্মরণ করতে ও হূদয়ের শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করতে সমবেত হবেন আগামী ৩০ শে এপ্রিল বিজন সেতুতে তাপ দগ্ধ দ্বিপ্রহরে৷ দেখতে দেখতে কেটে গেল ৪০ বছর৷ অদ্যাবধি ভারতের মতো বিরাট গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এই নির্মম  হত্যাকান্ডের কোন সুরাহা করলেন না৷ আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘের পক্ষ থেকে প্রথম থেকেই দাবী করা হয়েছে যেহেতু তৎকালীন রাজ্য সরকার বামফ্রন্টের ষড়যন্ত্র ও প্ররোচনায় এই নির্মম হত্যাকাণ্ড অনুষ্ঠিত হয় সেই কারণে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সত্য উদ্ঘাটনে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের কর্মরত বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত করে দোষীদের চিহ্ণিত করে শাস্তি দেওয়া হোক৷

 গত ২০১১ সালে দীর্ঘ ৩৪ বছর পর রাজ্য সরকারের পরিবর্তন হয়েছে৷ নোতুন সরকার তৎকালীন নির্বাচনী প্রচারে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের প্রতিশ্রুতি দেন ও দোষীদের শাস্তি দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন৷ শুধু তাই নয় যখনই নির্বাচন আসে তখনই কিন্তু সেই আনন্দমার্গের ১৭জন সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনী হত্যার মর্মন্তুদ ঘটনার উল্লেখ রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বর্ত্তমান সরকারের পক্ষ হতে করা হয়৷  যে সব দুষৃকতিদের দিয়ে এই পৈশাচিক কাণ্ড জ্যোতি বসুর দল ঘটান তাদের না ধরে রাস্তার কিছু হতভাগ্য নিরপরাধকে ধরে বিচারের প্রহসন ঘটিয়ে সবটাই ধামাচাপা দিয়ে দেয় বামফ্রণ্ট সরকার৷ মনে পড়ে প্রাতঃস্মরণীয় সাহিত্যিক ও কবি শ্রদ্ধেয় অন্নদাশঙ্কর রায় এই পশ্চিমবাঙলার শিল্পী সাহিত্যিকদের নিয়ে কলকাতার রাজপথে নীরব শোক মিছিল করেন৷ তাতে কিছু রাজনৈতিক নেতা ও পার্ষদ ঠাট্টা করতে ছাড়েননি৷ তাঁদের অনেকেই দেহ রেখেছেন৷ ওদিকে তৎকালীন দিল্লীর কংগ্রেস সরকার যার প্রধান ছিলেন খোদ ইন্দিরা গান্ধী তিনি সিপিএম ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের সহায়তায় সরকার চালাতেন বলে এই শতাব্দীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কোন প্রতিক্রিয়া জানাননি৷ জ্যোতি বসু এই ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেছিলেন৷ যদি ভারতের মত মহান দেশের গণতান্ত্রিক সরকার সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনীর নির্মম হত্যাকাণ্ডের সত্য উদ্ঘাটন না করেন তাহলে নিরপেক্ষ বিচারে অক্ষম সরকার গণতন্ত্রকে প্রহসনে পরিণত করে, ইতিহাস তাই বলবে৷ নিরীহ সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনীর নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘৃণ্য বধ্যভূমি বলে পরিগণিত হবে সভ্যতা ও সংস্কৃতির পীঠস্থান কলিকাতা৷ যে সর্বত্যাগী তরুণ–তরুণী জগৎ কল্যাণে আত্মোৎসর্গ করে সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনী হয়েছেন তাঁরা যদি জগৎ সেবার সুযোগ না পেয়ে রাজনৈতিক দলের ক্যাডার জল্লাদের দ্বারা নৃশংসভাবে নিহত হন তাহলে সেই দেশের গণতন্ত্রের দশা অদূর ভবিষ্যতে যে কি হবে  তা ভাবতেও ভয় লাগে৷ অপরাধীর সাজা যদি না হয় তার পরিণতি যে কি হতে পারে মানুষ টের পাচ্ছে৷ বিজনসেতুর সেই পাপই আজ রামপুরহাটের এক গণ্ড গ্রাম বগটুই–এ পৌঁছে গেছে৷ রাজ্যের গ্রাম শহরে যে সব নক্কারজনক ঘটনা ঘটছে বা দুষৃকতিরা ঘটাতে সাহস পাচ্ছে তার কারণ ৩৪বছর এখানে অপরাধীর বিচার হয়নে৷

তাই বর্তমান সরকারের কাছে সকলেই আশা করে তারা যেন সকল গৃহী, সন্ন্যাসী, সন্ন্যাসিনীর নিরাপত্তা দান করে দেশে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করে মানুষের আস্থা ভাজন হন৷ যদি তা না হয় মানুষ গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা রাখতে পারবে বলে মনে হয় না৷ বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের পুণ্যভূমি জল্লাদি ক্যাডারদের বধ্যভূমিতে পরিণত হবে৷ দিনে দুপুরে সেখানে প্রেতের নৃত্যই চলবে৷

গণতন্ত্রে শাসকের ভূমিকা যে খুবই দায়িত্বপূর্ণ একথা উপলব্ধি করার মতো নেতৃত্ব আজ এদেশে নেই৷ যিনি শাসনের শীর্ষে অবস্থান করবেন, তিনি দেশের সকল নাগরিকের অভিভাবক ও রক্ষক৷ তখন তাঁর দলের ক্যাডারদের মতো আচরণটা হয়ে দাঁড়ায় সংবিধান বিরোধী আচরণ৷ সেই কারণে সারা ভারতের প্রতিটি নিরপেক্ষ নাগরিক নারী পুরুষ নির্বিশেষে দাবী জানান– বিজন সেতুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সত্য উদ্ঘাটিত হোক৷

এ কথা অত্যন্ত বেদনা ও দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যে বহু বছর হয়ে গেল এতো বড়ো বর্বরতার কোন বিচার হ’ল না এটা যে সরকারের চরম ব্যর্থতা ও অপদার্থতা সেটা এক বাক্যে মেনে নিতেই হয়৷ তবে এক দিন না একদিন সত্য উদ্ঘাটিত হবেই হবে, সেদিন বহু রাজনৈতিক নেতা ক্যাডাররা ছাড় পাবেন না কারণ এটা যে একটা পূর্ব পরিকল্পিত জঘন্য রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সেটা তৎকালীন সরকারী আমলাগণ বিভিন্ন ভাবে উল্লেখ ও ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন৷

বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বিজনসেতুর সত্য উদ্ঘাটনে বিচারপতি অমিতাভ লালার নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেন৷ সেই তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরে তিনবছর আগে জমা পড়ে৷ কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তা আজও প্রকাশ্যে আসেনে৷ তবে বিজনসেতুর পৈশাচিক ঘটনার সত্য উদ্ঘাটনে ও গণতন্ত্রের স্বার্থে লালা কমিশনের তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া প্রয়োজন৷