পাটশিল্পকে ধ্বংস হতে দেওয়ার অর্থ সোনার বাংলাকে শ্মশানে পরিণত করা

লেখক
প্রবীর সরকার

পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ এলাকা হ’ল বাংলা

(বঙ্গ) বাঞ্জাল৷ এই উর্বর এলাকায় দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর৷ পশ্চিমে বনাঞ্চল, পূর্বে আরাকান ইয়োমা,  পেগু ইয়োমা আর উত্তরে বিশাল হিমালয় ও অসম অঞ্চল৷ নদীমাতৃক এলাকা৷ আজ দুর্ভাগ্যের কারণে দ্বিখণ্ডিত হয়েছে এই বিরাট বদ্বীপ এলাকা৷ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ আজ এই বৃহত্তম বদ্বীপ৷ মনে রাখা দরকার এই দুই অঞ্চলের দক্ষিণে বিশাল সুন্দরবন বিরাজ করছে৷ ধান, পাট, ডাল, কলাই, আম, কাঁটাল, জাম, ফল ও ফুলে সমৃদ্ধ সারা বদ্বীপ৷ গো–মহিষাদি, মাছ প্রচুর পাওয়া যায়৷ খাদ্যের কোন অভাব এখানে নেই৷ নারিকেল, সুপারী, কমলা, চা এই এলাকাকে সমৃদ্ধ করে রেখেছে৷ বিরাট বনাঞ্চলে মূল্যবান শাল, সেগুন, সুন্দরী, গামা, নিম, নানা ধরণের হার্ডউড থাকায় এই এলাকায় আসবাবপত্র তৈরী হয়৷ তা ছাড়া কয়লা ও নানা ধরণের খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ এই এলাকা৷

নানা ধরণের বাঁশ, বেত, মশলাপাতি, পশুপক্ষী সমৃদ্ধ ও কলা জাতীয় সুখাদ্যে বাংলা ভরপুর৷ মোদ্দা কথা, জল সম্পদ, বনজ, খনিজ, কৃষিজ–প্রাকৃতিক সম্পদে এই এলাকাকে পরিপূর্ণ করে মহান স্রষ্টা ধন্য করেছেন এই সোনার বাংলাকে৷ একে যথোপযুক্তভাবে ব্যবহার করে এই এলাকার অধিবাসীরা যদি নিজেদের অভাব পূরণ করতে না পারে সেটা তাদেরই ব্যর্থতা৷ পশ্চিমবঙ্গ নামে এলাকাটি ভারত যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্গত৷ বাংলাদেশ পূর্বে অবস্থিত বর্তমানে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃত৷ প্রাকৃতিক সম্পদের ভরপুর হয়েও এই দুই এলাকা নানা সমস্যায় জর্জরিত৷আর্থিক দিক হতে অনুন্নত দুই এলাকা৷ উপযুক্ত পরিকল্পনা ও সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থা না থাকায় ও নানা কারণে কলকারখানা ও শিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়াতে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের সামাজিক ও আর্থিক অবস্থা শোচনীয়৷ দেশ ভাগ হওয়াতে দারুণ সামাজিক ও আর্থিক সংকটে ভুগছে সমগ্র বাঙালী জনগোষ্ঠী৷ 

পশ্চিমবঙ্গে কমিউনিষ্ট শাসকদের চরম শোষণে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে পশ্চিম বাংলা৷ আর বাংলাদেশ পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশ হিসাবে গণ্য হয়৷ পরে মুজিবরের স্বাধীনতা আন্দোলনে নোতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়৷ কিন্তু কট্টর–জঙ্গী মুসলীম হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় নোতুন রাষ্ট্র৷ মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কিন্তু সন্তুলিত কৃষিজ ও কৃষিভিত্তিক কলকারখানা না হওয়াতে আর্থিক সংকটে দেশ ভুগছে৷ চরম বেকার সমস্যা আজ দেশকে দুর্বল করে তুলেছে৷ ঠিক যেমন বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ৷ কেন্দ্রের দিল্লি সরকারের অসহযোগিতায় নোতুন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মাথায় ঋণের বোঝা৷ ধীরে ধীরে সকল কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মন্দার কারণে৷ পাট শিল্প পশ্চিম বাংলার একটি লাভজনক অর্থকরী শিল্প ছিল৷ কিন্তু এই শিল্প নানা কারণে ও অসহযোগিতার জন্যে চটকলগুলি একে একে বন্ধ হয়ে যাওয়াতে চরম দুর্মূল্যের বাজারে হাজার হাজার পরিবার চরম আর্থিক সংকটের সম্মুখীন৷ পাট জাত দ্রব্যের বহিঃ বিশ্বের বাজারকে রক্ষা করার তেমন প্রচেষ্টা এদেশের সরকারের নেই৷ পাট অর্থকরী ফসল৷ এর পাতা শাকের কাজ করে৷ এর আঁশ হতে যে তন্তু পাওয়া যায় তা হতে চটশিল্প, পাটশিল্প, পাপোস, কার্পেট, নানাধরণের সৌখিন জিনিস হয়৷ যার কদর সারা পৃথিবীতে আছে৷ সংবাদে প্রকাশ–ফ্রান্স, আর্জেন্টিনায় পাটজাত সৌখিন জিনিসের কদর বাড়ছে৷ ইংরেজ বিশ্বের বাজারে বিরাট সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে৷ ভারত সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার পাট শিল্পকে অবহেলা করে ধ্বংস করে ফেলছে৷ পাটকাঠি কাগজ শিল্পে কাজে লাগে৷ সারা বাংলাতে পাট জন্মায়৷ পাট–এর তন্তুকে কুটির শিল্পের মাধ্যমে পাট সূতা তৈরী করে পাটের বস্ত্র তৈরী করে এই শিল্পকে রক্ষার প্রচেষ্টা যে জরুরী একথা তো জনসাধারণ ও সরকারকে বুঝতে হবে৷ পাট দেশকে আর্থিক বিপর্যয়ের হাত থেকে অবশ্যই বাঁচাতে পারে৷

তাই পাটশিল্পগুলোকে প্রয়োজনে উৎপাদনের পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে৷ পাট হতে কার্পেট তৈরী করা যেতে পারে৷ শিল্পজাত কাপড় তৈরী হতে পারে৷ ঘন পাটজাত চট হতে নানাধরণের সৌখিন জিনিস হতে পারে৷ পাট কাটিকে কাগজ তৈরীতে কাজে লাগানো যায়৷ পরিবর্তনের সাথে সাথে সব কিছুকে পরিবর্তন করেই  কাজে লাগাতে হয়, এটাই সুসামঞ্জস্য বিধান ও সুশাসন৷ তাই তো মনে হয় মহান দার্শনিক প্রাউট প্রবক্তা শ্রদ্ধেয় শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার আক্ষেপ করে বলেছিলেন, হয়তো একদিন সময় আসবে গেরস্তের উঠানে পাট স্থান পাবে শাক ব্যবহারের জন্য৷

তাঁর সাবধান বাণীকে অবশ্যই স্মরণে রাখতে হবে৷ আজ একের পর এক চটকলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়াতে হাজার হাজার পরিবার আজ যে রাস্তায় বসেছে তাদের কথাতো মনে রাখতে হবে৷ তাই আর দেরী না করে, চট কলগুলো যাতে খোলে তার আশু ব্যবস্থা সরকারের ও শ্রমিকরা আন্তরিকতার সঙ্গে করুন৷ পাটকে উপযুক্তভাবে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নিন৷ রাজ্যের সরকার পাটের থলিকে অগ্রাধিকার দিন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংরক্ষণের ও পরিবহনের জন্যে৷ অত্যন্ত দুঃখের কথা কেন্দ্র সরকার পাটের থলি অর্থাৎ চট–এর থলি ব্যবহারকে উৎসাহ না দেওয়াতে, উৎপাদিত সামগ্রী জমে যাওয়াতে নাকি অনেক চটকল বসে যাচ্ছে৷ মন্দার কারণে নাকি মাল বিক্রি হচ্ছে না৷ এইসব বিষয়গুলিকে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে সহানুভূতির সঙ্গে তা দেখতে হবে৷ তা না হলে হতভাগ্য নাগরিকগণ তো অনাহারে সপরিবারে শেষ হয়ে যাবেন

বাংলাদেশেও পাটশিল্প চরম সংকটে৷ ভারত ও বাংলাদেশকে এ ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে৷ এটা একটা মানবিকতার ও আর্থিক উন্নয়নের বিষয়৷ .