সমাজচক্র

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

সমাজচক্র ঘুরে চলেছে৷ শূদ্র যুগের পরে এসেছে সর্দারদের যুগ অর্থাৎ ক্ষাত্র যুগ, তারপরে বিপ্রযুগ, তারপর বৈশ্য যুগ আর তারপর শূদ্র বিপ্লবের পরে চক্রের দ্বিতীয় পরিক্রান্তিতে আসে নূতন ক্ষাত্র যুগ---যে ক্ষত্রিয়রা শূদ্র বিপ্লবে নেতৃত্ব করেছিল তাদের যুগ৷ চক্র এইভাবেই ঘুরে চলবে৷ নিছক আদর্শবাদ প্রচার করে এর ঘোরা থামানো যাবে না৷ একটি যুগের পর অপর যুগটি ক্রমবিন্যস্ত হয়ে রয়েছে৷ একটি যুগের গমনের পরে অন্যের আগমনের নাম দিতে পারি ক্রান্তি৷ একটির শেষ অন্যটির শুরু এই যুগসন্ধির অবস্থাকে লতে পারি যুগসংক্রান্তি৷ শূদ্র-অভ্যুত্থানের পর থেকে পরবর্তী শূদ্র-অভ্যুত্থান পর্যন্ত চক্রের সম্পূর্ণ পরিক্রমণের নাম দিতে পারি পরিক্রান্তি৷ এক একটি যুগে এক একটি বর্ণ শাসকের ও শোষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়৷ 
এই বিশ্ব, এই সমাজ সকলকারই৷ এর প্রতিটি ধূলিকণা প্রত্যেকের পৈতৃক সম্পত্তি৷ তাই কোনো বর্ণ বিশেষের রাজত্ব চলতে দেওয়া কিছুতেই উচিত নয়৷ চক্রের পরিক্রান্তি চলর্ে আর সঙ্গে সঙ্গে চালিয়ে যেতে হবে প্রতিটি বর্ণ-অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সদ্বিপ্রের সংগ্রাম৷ সমাজ সবাইকার কিন্তু এর অধিনায়কত্ব করবে সদ্বিপ্ররা৷ ক্ষত্রিয়ের ওপর সমাজের ভার ছেড়ে দিতে পারা যায় না কারণ সে ক্ষত্রিয় রাজত্ব কায়েম করতে চাইবে---অক্ষত্রিয়কে শোষণ করবে, দুলকে চিবিয়ে খাবে৷ বিপ্রের ওপর সমাজের ভার ছেড়ে দেওয়া যায় না কারণ সে বিপ্র-রাজত্ব কায়েম করতে চাইবে---অবিপ্রকে শোষণ করবে, দ্ধিহীনকে চিবিয়ে খাবে৷ বৈশ্যের হাতেও সমাজের ভার ছেড়ে দেওয়া যায় না কারণ তারা বৈশ্য রাজত্ব কায়েম করতে চাইবে---অবৈশ্যকে শোষণ করবে, মেহন্নতী মানুষকে চিবিয়ে খাবে৷ শূদ্র সমাজের নেতৃত্ব নিতে পারে না৷ শূদ্র-অভ্যুত্থানের ফলে শূদ্রের যে জয় হয় সে জয়তিলক ক্ষত্রিয়ের ললাটেরই শোভাবর্ধন করে৷ ভার দেওয়া যায় সদ্বিপ্রের ওপর তাঁরা যম-নিয়মে প্রতিষ্ঠিত---ভূমাভাবের সাধক৷ সমাজচক্র ঠিকই ঘুরে চলবে৷ যথাবিধি ক্ষত্রিয়, বিপ্র ও বৈশ্যের অভ্যুত্থানও হবে৷ কিন্তু সদ্বিপ্রের অধিনায়কত্ব থাকলে ওই অভ্যুত্থানের ফলে তারা সমাজ-জীবনে কিছুটা প্রাধান্য লাভ করলেও কোনো কালেই সর্বময় কর্তা হয়ে বসতে পারবে না৷ সদ্বিপ্ররা কোনো কালেই বিশ্রাম পাবে না৷ তাদের অক্লান্তভাবেই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে৷ এই সংগ্রামই জীবের জীবন৷ এই সংগ্রাম না থাকলে সৃষ্টিও থাকবে না৷ সদ্বিপ্ররা একাধারে বিপ্র, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র, তাই তাদের  জয় হ’ল সর্ববর্ণের জয়৷