২০ লক্ষ গাছের চারা পুঁতে আবার নতুনভাবে অরণ্য তৈরি করেছেন ব্রাজিলের এক দম্পতি

সংবাদদাতা
পি.এন.এ.
সময়

প্রায় ৩২ কোটি একর জমি জুড়ে জঙ্গল৷ আয়তনে দক্ষিণ আফ্রিকার সমতুল্য৷ নববইয়ের দশকে গাছ কাটার কারণে ব্রাজিলের একাংশের ঘন জঙ্গলের অস্তিত্ব পুরোপুরি মুছে যায়৷ দুই দশক জুড়ে সেই এলাকায় ২০ লক্ষ গাছের চারা পুঁতে আবার নতুন ভাবে অরণ্য তৈরি করেন ব্রাজিলের এক দম্পতি৷ ১৯৪৪ সালে ব্রাজিলে জন্ম সেবাস্টিয়াও রিবেইরো সালগাদোর৷ সে দেশের খ্যাতনামী চিত্রসাংবাদিক তিনি৷ পেশার প্রয়োজনে বিশ্বের ১২০টি দেশ ঘুরে ফেলেছেন তিনি৷ তাঁর কলমে লেখা রয়েছে একাধিক বই৷ ছবি তোলার পেশাই তাঁর জীবনকে অন্য মোড়ে দাঁড় করায়৷ ২০১৫ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেবাস্টিয়াও জানিয়েছিলেন, ১৯৯৪ সালে মধ্য আফ্রিকার রোয়ান্ডায় যুদ্ধ চলাকালীন সেই বিষয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করতে গিয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু ঘটনার ভয়াবহতা সহ্য করতে পারেননি৷ যুদ্ধের ভয়াবহতায় মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন সেবাস্টিয়াও৷ কাজ থেকে কিছু দিনের জন্য বিরতি নিয়ে ব্রাজিলে নিজের বাড়িতে চলে যান তিনি৷ বেশ কয়েক বছর পর বাড়ি ফিরে চমকে ওঠেন চিত্রসাংবাদিক৷ সেবাস্টিয়াও সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, ব্রাজিলের যে এলাকায় তিনি থাকতেন সেখানে বিশাল অরণ্য ছিল৷ কিন্তু ১৯৯৪ সালে সেখানে গিয়ে তিনি দেখেছিলেন, পুরো এলাকা খাঁ খাঁ করছে৷ অরণ্য কোথায়! একটি গাছও নেই সেখানে৷ সেবাস্টিয়াও বলেছিলেন, ‘‘আমি যেমন ভিতর থেকে মরে গিয়েছিলাম, জায়গাটি দেখেও মৃত বলে মনে হয়েছিল৷ আমার স্ত্রীকে সেই কথা জানানোয় ও বলেছিল, আবার নতুন করে সেখানে প্রাণ সঞ্চার করা হবে৷’’ ১৯৬৭ সালে লেইলা ওয়ানিক সালগাদোকে বিয়ে করেছিলেন সেবাস্টিয়াও৷ তথ্যচিত্রনির্মাতার পাশাপাশি লেইলা এক জন পরিবেশবিদও৷ ব্রাজিলের সেই শূন্য এলাকায় আবার অরণ্য তৈরি করতে উদ্যোগী হন তিনি৷ যেমন ভাবা, তেমন কাজ৷ ব্রাজিলে নিজস্ব সংস্থা গড়ে তোলেন সেবাস্টিয়াও এবং লেইলা৷ সেই সংস্থার তরফে চার লক্ষ চারাগাছ পোঁতা হয়৷ ৩২ কোটি একর জমি জুড়ে গাছের চারা পুঁততে শুরু করেন দম্পতি৷ স্থানীয় এলাকায় যে গাছগুলি বেড়ে ওঠে সেই গাছের বীজ পোঁতার সিদ্ধান্ত নেন সেবাস্টিয়াও এবং লেইলা৷ সাক্ষাৎকারে সেবাস্টিয়াও বলেছিলেন, ‘‘ঘন জঙ্গল তৈরির পরিকল্পনা করলে শুধু গাছ লাগালেই হয় না৷ এলাকাটি এমন ভাবে তৈরি করতে হয় যে আশপাশ থেকে পোকামাকড়, সাপখোপ আসতে পারে৷ বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তুও যেন আশ্রয় নিতে পারে৷ তা হলেই সামগ্রিক ভাবে একটি অরণ্য বেড়ে উঠতে পারে৷’’ পরিকল্পনা মতো এগিয়ে যেতে থাকেন সালগাদো দম্পতি৷ দুই দশক ধরে গাছের চারা পুঁতে ওই এলাকায় সত্যিই জঙ্গল তৈরি করে ফেলেন তাঁরা৷ বর্তমানে সালগাদো দম্পতি নির্মিত ব্রাজিলের ওই অরণ্যে রয়েছে ২০ লক্ষেরও বেশি মোট ২৯৩টি প্রজাতির গাছ৷ জঙ্গলে ১৭২টি প্রজাতির পাখির পাশাপাশি ৩৩টি প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৫টি প্রজাতির সরীসৃপ এবং ১৫টি প্রজাতির উভচর প্রাণী নিয়ে আস্ত একটি বাস্তুতন্ত্র গড়ে ফেলেছেন তাঁরা৷ পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতি বছর এক কোটি একর জমিতে তৈরি হওয়া জঙ্গল কেটে ফেলা হয়৷ সেবাস্টিয়াও যখন বাড়ি গিয়েছিলেন তখন এলাকার মাত্র ০.৫ শতাংশ জমিতে গাছ ছিল৷ বর্তমানে সেখানে গড়ে উঠেছে ঘন জঙ্গল৷ সেবাস্টিয়াও বলেছিলেন, ‘‘পৃথিবীতে গাছই একমাত্র জিনিস যা কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে অক্সিজেন তৈরি করতে পারে৷ প্রকৃতিই আমাদের কাছে বিশ্বসমান৷ আমরা যদি নিজেদের সাধ্যমতো পৃথিবীকে কিছু না দিতে পারি তা হলে আমাদেরই ভুগতে হবে৷’’