এন আর সি-র অজুহাতে বাঙালী বিতাড়নের চক্রান্ত, রাজ্যে হিন্দীর আগ্রাসন, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলিকে পশ্চিমী পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেওয়া, কেন্দ্রীয় সরকারের বাঙালী বিদ্বেষী আচরণের প্রতিবাদে ১৬ই নভেম্বর ধর্মতলার রাণী রাসমণি রোডে ‘আমরা বাঙালী’ বিশাল সমাবেশের আয়োজন করেছিল৷
পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড থেকে আগত বিশাল সংখ্যক মানুষ সমাবেশে জমায়েত হয়েছিল৷ অসম, ত্রিপুরা, মণিপুর থেকেও ‘আমরা বাঙালী’ প্রতিনিধিরা সমাবেশে যোগ দেয়৷ ওই দিন সকাল থেকেই ‘আমরা বাঙালী’ কর্মী সমর্থকরা ধর্মতলা চত্বরকে সবুজ পতাকায় মুড়ে দেয়৷ উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের জেলাগুলি থেকে কর্মী সমর্থকরা সকাল থেকেই বিভিন্ন ট্রেনে এসে হাওড়া ও শিয়ালদহ ষ্টেশনে জমা হয়৷
শিয়ালদহ ষ্টেশন থেকে কর্মী সমর্থকরা চলে যান শ্রদ্ধানন্দ পার্কে৷ বেলা ১১-টার সময় সেখান থেকে এক বিশাল মিছিল রাণী রাসমণি রোডের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে৷ একই সময় দক্ষিণ বঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড থেকে আসা জনতা হাওড়া ষ্টেশন থেকে রওনা হয় রাণী রাসমণি রোডের দিকে৷ সবুজ ফেস্টুন, পতাকা, ব্যানারে সুসজ্জিত সুশৃঙ্খল মিছিল স্বতঃস্ফূর্ত শ্লোগান দিতে দিতে রাসমণি রোডের দিকে এগিয়ে চলে৷ মিছিল থেকে আওয়াজ ওঠে---‘এন আর সি-র কালা কানুন---মানছি না মানব না’, ‘এন আর সি-র অজুহাতে কোন বাঙালীকে বিদেশী বলা চলবে না’, ‘রাজ্যে হিন্দী আগ্রাসন রুখছি রুখব’ ইত্যাদি৷ বহু সাধারণ মানুষ মিছিলকে স্বাগত জানায়৷
দুটো মিছিল রাণী রাসমণি রোডে পৌঁছানোর পর দেবব্রত দত্ত মঞ্চ থেকে আবাজ ওঠে---এন আর সি-র কালাকানুন জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও৷ এন আর সি-র অজুহাতে একটি বাঙালীকেও বিদেশী বলা চলবে না৷ এরপর সভার কাজ শুরু হয়৷ সভায় সভাপতির আসন অলঙ্কৃত করেন ‘আমরা বাঙালী’র বরিষ্ঠ নেতা শ্রীপ্রভাত খাঁ৷ উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন সচিব শ্রীশঙ্কর গাঙ্গুলী, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শোলাশিল্পী শ্রী অনন্ত মালাকার৷ প্রাক্তন সচিব শ্রী শঙ্কর গাঙ্গুলী বয়সের ভারে অসুস্থ শরীর নিয়ে সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন৷’ ৮০-র দশকে অসম, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ আমরা বাঙালীর আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছিল৷ সেই সময় কেন্দ্রীয় সচিব ছিলেন শ্রী শঙ্কর গঙ্গোপাধ্যায়৷ তিনি চেয়ারে বসেই তাঁর সংক্ষিপ্ত ভাষণ রাখেন৷ বাঙলার এই দুর্দিনে সমস্ত রকম রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক বিভেদ ভূলে বাঙালীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নাবার আহ্বান জানান তিনি৷
সভার শুরুতে স্বাগত ভাষণ দেন ‘আমরা বাঙালী’র কলকাতা জেলা সচিব শ্রী গোপাল রায়চউধুরী৷ এছাড়া সভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সচিব বকুল রায়, অসম রাজ্য সচিব সাধন পুরকায়স্থ, ত্রিপুরা রাজ্য সচিব হরিগোপাল দেবনাথ, মণিপুরের বাঙালী বিধায়ক, সংগঠনের কলকাতা, দুই ২৪ পরগণা, নদীয়া, মুর্শিদাবাদের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীজয়ন্ত দাশ, বাঙালী বিদ্বৎ সমাজের পক্ষে জ্যোতিবিকাশ সিন্হা প্রমুখ নেতৃবৃন্দ৷
কেন্দ্রীয় সচিব বকুল রায় বলেন---যারা বাঙালীকে উইপোকা বলে তাদের জেনে রাখা ভালো উইপোকা নয়, বাঙলায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার থাকে৷ বাঙালীর রক্তে দেশ স্বাধীন হয়েছে৷ অসমে অসমিয়ারাই বিদেশী৷ বাঙালী অসমের ভূমিপুত্র৷
অসম রাজ্য সচিব শ্রী সাধন পুরকায়স্থ বলেন---অসমের ডিটেনশন ক্যাম্পগুলি বাঙালী হত্যার কষাইখানা৷ বাঙালীকে হত্যা করার জন্যেই এন আর সি৷ তিনি বলেন সংসদে যখন এন আর সি বিল পাশ হয়েছিল তখন কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল কেউই প্রতিবাদ করেনি৷ তাই এন আর সি-র জন্যে তোমরা সবাই দায়ী৷ অসমে নিরাপত্তা বাহিনী কোনও আন্দোলন করতে দিচ্ছে না৷ তিনি বলেন---কলকাতার মানুষকে অসমের পাশে থাকতে হবে৷ গণ আন্দোলনে নামা ছাড়া বাঙালীর সামনে অন্য কোন পথ নেই৷ শ্রী জয়ন্ত দাশ তাঁর বক্তব্যে রাজ্যে হিন্দী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ও রাজ্যে হিন্দী ভাষী তোষণে পূর্বতন বামফ্রণ্ট সরকার ও বর্তমান সরকারের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন৷ তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন---কলকাতা আর বাঙালীর হাতে নেই৷
বক্তারা যখনই এন আর সি-র বিরুদ্ধে ও হিন্দী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন উপস্থিত জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তা সমর্থন করেন৷ এন আর সি-র অজুহাতে বাঙালী নির্যাতন ও হিন্দী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণ আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে আমরা বাঙালী৷নাগরিক সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে অসম সহ উত্তর-পূর্বঞ্চলে বিক্ষোভ আন্দোলন
নাগরিক সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে অসম সহ উত্তর-পূর্বঞ্চলে বিক্ষোভ আন্দোলন
পি.এন.এ, ১৯শে নবেম্বর ঃ বিজেপি উত্তর পূর্বাঞ্চলে উগ্র জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলিকে সন্তুষ্ট করে তাদের সাহায্যে ক্ষমতা দখল করতে অসমে এন আর সি চালু করতে মেতে উঠেছিল৷ এখন এই এন আর সি-র ফলে অসমে ১২ লক্ষ হিন্দু বাঙালী ভিটেমাটি ছাড়া হচ্ছে৷ তাদের ক্ষোভ প্রশমিত করতে অন্যত্র এন আর সি-র আতঙ্ক থেকে হিন্দুদের আশ্বাস দিতে তড়িঘড়ি সংসদের
শীতকালীন অধিবেশনে নাগরিক সংশোধনী বিল পাশ করাতে কেন্দ্রীয় সরকার মরিয়া৷ কিন্তু বিজেপির সামনে আবার নতুন চ্যালেঞ্জ অসমের ও তার সঙ্গে সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মণিপুর, নাগাল্যাণ্ড, মেঘালয় প্রভৃতি রাজ্যেরও উগ্র জাতীয়তাবাদীরা নাগরিক সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে সর্বত্র ধর্ণা বিক্ষোভ ও মিছিল শুরু করে দিয়েছে৷ বিজেপি এখন উভয় সঙ্কটে৷