শিব নাকি শ্রাবণ মাসে জন্মেছিলেন৷ আর বিয়ে করেছিলেন চৈত্র মাসের শেষের দিকে৷ বিয়ে হয়েছিল নীল চণ্ডিকার সঙ্গে৷ তাই চৈত্রমাসের শেষে হিন্দু নারীরা নীলের উপোস করে৷ আর তার সঙ্গে গাজন উৎসব শুরু হয়৷ শিবের বিয়ে উপলক্ষে সন্ন্যাসীরা ছিলেন বরযাত্রী৷ বরযাত্রীরা মাঝে মাঝে গর্জন করতেন৷ সেই গর্জন থেকে ‘গাজন’ শব্দের উৎপত্তি৷
না, শিবের বিয়ে নীল চণ্ডিকার সঙ্গে হয়নি৷ শিবের বিয়ে প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি বলেছেন---‘সেকালে বহু বিবাহের প্রচলন ছিল৷ শিবেরও তিন স্ত্রী ছিলেন৷ আর্যকন্যা পার্বতী, অনার্য কন্যা কালী, আর মঙ্গোলীয় কন্যা গঙ্গা৷’ (তন্ত্রই সাধনা সাধনাই তন্ত্র)
কেউ কেউ বলেন, গাজনের শেষ দিনে হয় চড়ক৷ মাটিতে চড়কের গাছ পুঁতে তার মাথায় আড়ভাবে একটা বাঁশ এমনভাবে বাঁধা হয় যাতে পাক খাওয়া যায়৷ আগে সন্ন্যাসীরা পিঠে লোহার বড় বড়শি বিঁধিয়ে বাঁশের শেষ অংশ থেকে ঝুলে পাক খেতো৷ এই নৃশংস প্রথাটিকে ইংরেজ সরকার ১৮৬৫ সালের ১৫ই মার্চ আইন করে বন্ধ করে দেন৷ তখন থেকে সন্ন্যাসীরা বুকে গামছা বা কাপড় বেঁধে চড়ক গাছে ঘুরপাক খেতে আরম্ভ করেন৷ চড়ক গাছটি হওয়া চাই শক্ত৷ নচেৎ ভেঙে পড়তে পারে৷ তাই শাল বা গজারি ব গর্জন গাছের একটি খুঁটি বছর খানেক পুকুরের জলে ডুবিয়ে রাখা হয়৷ গাজনের আগের দিন ভক্তরা সেই খুঁটি জল থেকে তুলে বেশ করে তেল মাখিয়ে মাটিতে পোঁতে৷ একে বলে গাছ জাগানো৷ এই গর্জন গাছের সাহায্যে অনুষ্ঠান হয় বলেই হয়তো উৎসবের নাম গাজন৷
আবার বর্তমানকালের পণ্ডিতগণ বলেন, সার্বজনীন ভাবনা থেকে গাজন শব্দের উৎপত্তি৷ গ্রামের সকলে মিলে এই উৎসবে অংশগ্রহণ করতো বলে এই উৎসবের নাম গাজন৷ গ্রাম+ জন= গা+ জন= গাজন৷
এ প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি বলেছেন ---‘অন্ততঃ একদিন প্রাণভরে চীৎকার করে শিবের নামে গর্জন করি, ‘শিব হে’ বলে মানুষকে আহ্বান করি৷ গর্জন> প্রাকৃতে গজ্জন> বর্তমান বাংলায় ‘গাজন’৷ (নমঃ শিবায় শান্তায়)৷
- Log in to post comments