কায়া ও কাশ

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

যে শব্দ বা সংরচনা বৈয়াকরণিক বিচারে ভুল কিন্তু সেই ভুল দীর্ঘকাল ধর সাহিত্যে চলে আসছে তাকে স্বীকার করে নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না৷ এই স্বীকৃতি দেওয়া হয় কোথাও শব্দ বা সংরচনার লালিত্যের খাতিরে, আবার কোথাও বা উপরোধে ঢেঁকি গেলার মত অবস্থায় পড়ে৷ সংস্কূতে  ‘অনাথিনী’ ‘প্রোষিত ভর্ত্তৃকা’ ‘বিপ্রলব্ধা’ প্রভৃতি শব্দগুলি এই ধরণেরই৷

ঠিক ওই রকমেরই হচ্ছে ‘কায়া’ শব্দটি৷ আসলে ‘চি’ ধাতুর উত্তর ‘ঘঞ’প্রত্যয় করে ‘কায়’ শব্দটি নিষ্পন্ন হয়েছে---যার মানে হচ্ছে ‘যা চয়ন করা হয়েছে৷’ ‘কায়া’ বলে কোন শব্দ নেই৷ কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ছায়া’র সঙ্গে মেলানোর খাতিরে ‘কায়া’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন, যা আজ শুধু বাংলাতেই নয়, অধিকাংশ ভারতীয় ভাষাতেই ছড়িয়ে পড়েছে৷ এ যেন সেই---

‘তুমি সুরের আগুন ছড়িয়ে দিলে কোন বনে,

সে আগুন জ্বলছে আজি সব মনে গো সব মনে৷৷’

অশরীরী অর্থে আজ ‘কায়াহীন’ শব্দটাই চলে৷ কবিতায় ‘কায়া’ শব্দটার ছড়াছড়ি৷ তা যাই হোক , কবিতায় চলুক, কিন্তু অন্যত্র ‘কায়া’ শব্দটার ব্যবহার না হওয়াই ভালো৷ তবে কবিতার জগতে একে মেনে নিতে হচ্ছে৷

 

‘কাশ’ মানে উজ্জ্বল৷ অনুরূপভাবে বিকাশ, প্রকাশ, আকাশ, প্রভৃতি শব্দ নিষ্পন্ন হয়েছে৷ কাশী মানেও উজ্জ্বল বস্তু বা স্থান৷ ‘কাশ’ শব্দের অন্য অর্থ ‘কাসি’ বা ‘হাঁপানি ব্যাধি’, যাকে শ্বাসরোগও বলা হয় তাকে৷ ‘কাশ’ শব্দের অর্থ ঔজ্জ্বল্য ও কাসির রোগ দুই-ই হয়৷ কিন্তু ‘কাশ’ শব্দের অর্থ ঔজ্জ্বল্য ও কাসির রোগ দুই-ই হয়৷ কিন্তু ‘কাস’ শব্দের মানে কেবল কাসির রোগই৷ বিকাশ মানে বিশেষরূপে উজ্জ্বল৷ আবার বিশেষরূপে কাসিও হবে৷ কিন্তু যদি ‘বিকাশ’ বলি তাহলে তার মানে হবে বড় রকমের কাসি৷ তাই ‘বিকাশ’-এর স্থলে ‘বিকাশ’ না লেখাই ভাল৷

                                                                                (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)