মানবিক-অমানবিক

লেখক
জ্যোতিবিকাশ সিন্হা

জীবন পথে চলতে গিয়ে আমরা কিছু ঘটনার সম্মুখীন হই বা কোন কোন ঘটনার সংবাদ জানতে পারি যা আমাদের মানবিক চেতনার গভীরে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দিয়ে যায়৷ এগুলোরই একটি মুর্শিদাবাদ জেলার হরিহরপাড়া ব্লকের চোঁয়া গ্রামের ঘটনা৷ এই গ্রামেরই পুরুত মশাই শ্রী সুভাষ রায়চৌধুরী গ্রামে গ্রামে পূজা পাঠ, পৈতে, বিয়ে, শ্রাদ্ধ ইত্যাদি অনুষ্ঠানে যজমানি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন৷ কয়েক মাস আগে তিনি অসহায় এক স্বামী পরিত্যক্তা ও নিগৃহীতা মুসলিম মহিলা, সখিনা বিবিকে দুটি নাবালক পুত্র-কন্যা সহ নিরাশ্রয় অবস্থায় দেখে দয়া পরবশ হয়ে তাঁর বাসভবনে ঠাঁই দিয়েছিলেন৷ সুভাষবাবুর স্ত্রী ও কন্যা তাঁর এই মানবিক আচরণের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন৷ সখিনা ও তার দুই সন্তান বর্তমানে সুভাষবাবুর পরিবারেরই অন্তর্ভুক্ত৷ বিভিন্ন কারণে সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষয়িষ্ণু পরিবেশে রায়চৌধুরী পরিবারের এই উদারতা ও মানবিকতার পরিচয় ভারতবর্ষ তথা বাংলার চিরন্তন মৈত্রী ও মিলনের ঐতিহ্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত৷ সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদের ঊধের্ব উঠে মানব ধর্ম পালনকেই সুভাষবাবুরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন৷ কিন্তু তাঁদের এই মানবিকতাপূর্ণ কাজকে মেনে নিতে পারেনি গ্রামের মাতববরের দল৷ ধর্ম রক্ষার অজুহাতে স্বঘোষিত মাতববরদের নিদানে সুভাষবাবুর যজমানির কাজ প্রায় বন্ধ হওয়ার মুখে৷ ‘ভিন্ন ধর্মের মানুষকে ঘরে রেখে কি যজমানি হয়!’---এই ধুয়ো তুলে চোঁয়া ও আশপাশের গ্রামে সুভাষবাবুর যজমানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে---ফলে সাধারণ গ্রামবাসীরা তাঁকে আর পূজা-পার্বন বা অন্যান্য অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত করছেন না৷ তাই রায়চৌধুরী পরিবারের গ্রামে প্রায় ধোপা-নাপিত বন্ধ হওয়ার অবস্থা৷ শুধু তাই নয়, পরিবারের আয়ের পথও পুরোপুরি বন্ধ৷ এই সংকটজনক পরিস্থিতিতেও দমে যাননি সুভাষবাবু ও তাঁর পরিবার৷ স্থানীয় হরিহরপাড়া ব্লকের বিডিও এই সংবাদ জানতে পেরে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সুভাষবাবুদের দিকে, স্থানীয় পঞ্চায়েতও সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে৷

এইরকমই আর একটি ঘটনা ঘটেছে মহারাষ্ট্রের মারাঠাওয়াডায়৷ গত ১৯শে জুলাই শুক্রবার রাত্রি সাড়ে বারোটা নাগদ ইমরান ইসমাইল নামক এক যুবক মোটর সাইকেলে বাড়ী ফিরছিলেন৷ এই সময় কয়েকজন দুষৃকতী তাঁকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে মারধর করে ও মোটর সাইকেলের চাবি কেড়ে নেয়৷ এছাড়াও তাঁকে দিয়ে ‘জয় শ্রীরাম’ বলতেও বাধ্য করা হয়৷ গোলমাল শুনে এক হিন্দু দম্পতি এগিয়ে আসেন ও প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ইমরানকে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে বাঁচান৷ এই ধরণের মানবিকতা প্রদর্শনের ঘটনা মাঝে মধ্যেই ঘটে৷ কিন্তু তার সামান্য অংশই পত্র-পত্রিকা বা অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়৷ এইসব জনদরদী, মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষজন আছেন বলেই সমাজ আজও টিঁকে আছে---আমরাও নিজেদের মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে পারছি৷ উল্টো দিকে বহু মুসলিম বা অন্য কোনও ধর্মমতে বিশ্বাসী মানুষেরাও অপরের সহায়তায় ধর্মমত-সম্প্রদায় নিরপেক্ষভাবে এগিয়ে এসেছেন বিভিন্ন সময়ে৷ রক্তদান শিবিরগুলিতে যাঁরা জনকল্যাণে রক্তদান করেন তাঁরা কোন বিশেষ সম্প্রদায় বা জাতি-বণ-ধর্মমতগত ভেদাভেদকে মাথায় রাখেন না৷ অঙ্গদান বা চক্ষুদানের ক্ষেত্রেও একই ভাবনা কাজ করে৷ দাতা বা গ্রহীতারা কোনও জাতি-সম্প্রদায়কে এই বিষয়ে গুরুত্ব বা বিশেষত্ব প্রদান করেন না৷

অবশ্য মানবিক ঘটনাগুলির বিপরীতে বিগত কয়েক বছর ধরে সারা দেশে জাতিগত বিদ্বেষ, ধর্মমতগত অসহিষ্ণুতা, সাম্প্রদায়িক বিভেদজনিত হানাহানি ও হিংসার ঘটনা বেড়েই চলেছে৷ গো-রক্ষা, গো-মাংস ভক্ষণ সংক্রান্ত বিভিন্ন গুজব ছেলেধরা বা ছোটখাটো চুরির রটনা ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে সত্যাসত্য নির্ণয়ের পূর্বেই গণপ্রহারের ঘটনা বর্তমানে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার৷ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাম্প্রতিক ‘জয় শ্রীরাম’ মাহাত্ম্য৷ গত ২০ জুন বাসন্তীর চুনাখালির অধিবাসী মাদ্রাসা শিক্ষক শাহরুফ হালদার ট্রেনে হামলার শিকার হয়েছিলেন৷ কয়েকজন যুবক শাহরুফের পোষাক ও ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে অপমানসূচক কথাবার্তার পর তাঁকে ‘জয় শ্রীরাম’ ধবনি দিতে জবরদস্তি করতে থাকে৷ মাদ্রাসার শিক্ষক অসম্মতি জানালে তাঁকে ট্রেনের কামড়াতেই মারধোর করে পার্কসার্কাস ষ্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়৷ গত ২২শে জুলাই সোমবার, পশ্চিম বর্ধমানে বার্ণপুরের হীরাপুরে একজন ফেরিওয়ালা, নাম মহম্মদ ইসরার, রাস্তায় জিনিসপত্র ফেরি করতে করতে যাচ্ছিলেন৷ এই সময় চারজন লোক মোটর বাইকে এসে তাকে ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে জোরাজুরি করে৷ মহম্মদ ইসরার তাদের নির্দেশ না মানায় ওই লোকেরা তাকে মারধর করে ও জোর করে তার পকেট থেকে কয়েক হাজার টাকা কেড়ে নেয়৷ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত এইসব ঘটনা (এর থেকে অনেক বেশী ঘটনা অপ্রকাশিতই থেকে যায়) মানব সমাজে অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলে৷

গত ২২শে জুলাই সোমবার সকালে আলিপুরদুয়ার জেলায় একজন মানসিক ভারসাম্যহীনকে ছেলেধরা সন্দেহে গণ পিটুনির ঘটনা ঘটে৷ ওই ভদ্রলোক তার নিজের ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে মালিগাঁও যাচ্ছিলেন৷ কিন্তু ভুল করে আলিপুরদুয়ার জংশনে নেমে পড়েন ও ঘুরতে ঘুরতে ভোলারডাবরির শালবাগানে চলে যান৷ সেখানে তাঁকে ছেলেধরা সন্দেহে স্থানীয় মানুষেরা বেঁধে পেটাতে থাকে৷ পরে খবর পেয়ে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়৷ প্রাথমিক চিকিৎসার পর বিকেলে ট্রেনে করে যাওয়ার সময় বীরপাড়ার দলগাঁও ষ্টেশনে পুনরায় একদল লোক ছেলেধরা সন্দেহে তাঁকে মারধর করতে থাকে৷ স্থানীয় আর.পি.এফ. তাঁকে উদ্ধার করে৷ সেই দিনই জলপাইগুড়ির নাগড়াকাটায় একজন বহুরূপী ভিখারীকে ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ দীর্ঘদিন ধরে ওই ব্যষ্টি বিভিন্ন বহুরূপীর সাজে ওই অঞ্চলে ভিক্ষাবৃত্তি করতেন৷ কিন্তু ছেলেধরার গুজবে তাঁকেও গণপ্রহারে মৃত্যুবরণ করতে হ’ল৷ শুধুমাত্র সন্দেহের বশে বহু মানুষ সমাজের কতিপয় নৃশংস মানসিকতার দুষৃকতকারীর প্রহারে আহত ও নিহত হচ্ছেন৷

গত ১৯শে জুলাই বিহারের সারণ জেলার বানিয়াপুরে গোরু চোর ও পাচারকারী সন্দেহে গ্রামবাসীরা তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে৷ একইভাবে ২রা জুলাই ত্রিপুরার ঢালাই জেলার রাইশাবাড়ী গ্রামে গোরুচোর সন্দেহে বুধি কুমার নামে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ তারও আগে গত ১৮ই জুন ঝাড়খণ্ডে খারসোঁয়া গ্রামে তবরেজ আনসারি নামে এক যুবককে চোর সন্দেহে ল্যাম্প পোস্টে বেঁধে গণ ধোলাই দেওয়া হয় ও তাকে ‘জয় শ্রীরাম’ ধবনি দিতে বাধ্য করা হয়৷ উপরিউক্ত ঘটনাগুলি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, দুর্বলের ওপর ধারাবাহিক যূথবদ্ধ আক্রমণের এক পরিকল্পিত চক্রান্ত৷ এক ধরণের পশুসুলভ মানসিকতা সম্পন্ন দুর্বৃত্তের দল ব্যষ্টিগত বা দলগত স্বার্থসিদ্ধির কারণে সারা দেশ জুড়ে সন্ত্রাস, হিংসা, বিদ্বেষ ও অসহিষ্ণুতার পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে যাতে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন প্রতিবাদী মানুষেরা গণপিটুনির ভয়ে এগিয়ে না আসে৷ কোনও সন্দেহভাজন ব্যষ্টি যদি সত্যিই অপরাধ করে থাকে তবে তাকে প্রশাসনের হাতে অর্পণ করে দিয়ে যথোপযুক্ত শাস্তি বিধানের ব্যবস্থা অবশ্যই করা উচিত৷ কিন্তু কোনও অবস্থাতেই আইন হাতে তুলে নেওয়া সমর্থনযোগ্য নয়---গণ প্রহারে মৃত্যু তো কখনোই নয়৷ এই ঘটনাগুলির ক্ষেত্রে প্রশাসনিক শৈথিল্য ও গাফিলতি অতি মাত্রায় প্রকট৷ গণপ্রহারের নায়কদেরকে চিহ্ণিত করে (এই চিহ্ণিতকরণ কোনও দুরূহ কাজ নয়, একটু চেষ্টা করলেই পালের গোদাকে পাকড়াও করা সম্ভব) ও গুজব রটনাকারীদের গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা না করলে এই ঘটনাগুলি ক্রমশঃ সংক্রামক ব্যাধির আকার নেবে ও সমাজ তথা দেশকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দেবে৷

উপরে বর্ণিত সংবাদপত্রে প্রকাশিত ঘটনাগুলি হিমশৈলের চূড়া মাত্র৷ এই ধরণের শত শত হিংসা, সন্ত্রাস, অসামাজিক, অনৈতিক, যৌন অত্যাচারের ঘটনা ঘটে চলেছে সারা দেশে---যাদের সংবাদ দেশের অন্যান্য অংশের মানুষ জানতেই পারে না৷ এইসব ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এগুলির মূল কারণ হচ্ছে অশিক্ষা ও কুশিক্ষা৷ বিশাল এই দেশের অর্ধেকের বেশী মানুষ অশিক্ষার শিকার৷ ফলে তারা বিভিন্ন ধরণের কুসংস্কার ও ভাবজড়তার দ্বারা গ্রস্ত৷ তাদের এই অশিক্ষাজনিত দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে স্বার্থান্বেষী ব্যষ্টিবর্গ বা রাজনৈতিক নেতানেত্রীগণ নিজেদের স্বার্থ-সিদ্ধির চেষ্টা করে ও বেশীরভাগ ক্ষেত্রে অর্থ বা অন্য কোনও প্রলোভনের বিনিময়ে তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করে ফেলে৷ অপরদিকে বৈশ্যতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার বিষময় ফল বর্তমান যুব সমাজের নৈতিক অধঃপতনের অন্যতম কারণ৷ ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটার ও অন্যান্য সমাজ মাধ্যমের নেশায় বুঁদ হয়ে যুব সমাজ ক্রমশঃ অলস, কর্মবিমুখ হয়ে কাল্পনিক জগতে বিচরণ করতে করতে অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে৷ বৈপ্লবিক চেতনা, সমাজচেতনা, নতুন কিছু করবার বা গড়বার মানসিকতা তারা হারিয়ে ফেলছে৷ নব উদ্যম ও প্রাণরসে ভরপুর যুবশক্তি হচ্ছে সমাজের মেরুদণ্ড স্বরূপ---আর এই মেরুদণ্ডই যদি দুর্বল হয়ে যায় তাহলে সমাজকেও এক ধরণের স্থবিরতা গ্রাস করে ফেলে৷ এই দুর্বল সমাজে বৈশ্যতান্ত্রিক শোষণযন্ত্রকে কায়েম রাখা অত্যন্ত সহজ৷ পুঁজিবাদীদের অর্থ আর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ক্ষমতার মিলিত চক্রব্যুহ থেকে সেই সমাজ বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে পায় না৷

দেশ তথা মানব সমাজকে এই ত্র্যহস্পর্শ থেকে রক্ষা করতে হলে এক দিকে প্রতিটি মানুষকে আধ্যাত্মিকতাভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে ও নব্যমানবতাবাদের ব্যাপক প্রচার-প্রসার ঘটাতে হবে৷ অপরদিকে প্রতিটি মানুষের জন্যে নূ্যনতম প্রয়োজনপূর্ত্তির (অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা) ব্যবস্থা করতে হবে৷ মানুষের নূ্যনতম প্রয়োজন না মিটলে সে খুব সহজেই যে কোন প্রলোভন বা দুর্নীতির ফাঁদে জড়িয়ে পড়বে৷ তাই প্রত্যেকের পেটের অন্ন, পরিধেয় বস্ত্রের সঙ্গে সঙ্গে সুশিক্ষার ব্যবস্থা অবশ্যই করা প্রয়োজন৷ একই সাথে সকলকে আধ্যাত্মিক চেতনা ও নৈতিক চরিত্রের মান উন্নত করার পাঠও দিতে হবে৷ এর ফলে মানুষের অন্তরের  কু-প্রবৃত্তির প্রকোপ কমবে ও মানবিক সুবৃত্তিগুলি বৃদ্ধি পাবে৷ স্নেহ, প্রেম, প্রীতি, ভালবাসা উজ্জীবিত হলে লোভ, হিংসা , ঘৃণার ভাব হ্রাস পাবে ও সমাজে তথা সংসারে শান্তি বজায় থাকবে৷ নিয়মিত আধ্যাত্মিক অনুশীলনের মাধ্যমে মানুষের মনে নব্যমানবতাবাদের ভিত্তি ক্রমশঃ সুপ্রতিষ্ঠিত হবে---আর তখন মানুষ শুধু মানুষকেই নয়, পরমপিতার সমগ্র সৃষ্টি মনুষ্যেতর অন্যান্য জীব, উদ্ভিদ, জড় সকলকেই বিশ্বপিতার সন্তান রূপে গ্রহণ করবে ও তাদের প্রতি যথোচিত ব্যবহার করতে প্রয়াসী হবে৷ মহান দার্শনিক ঋষি প্রভাতরঞ্জন সরকার প্রবর্ত্তিত ‘প্রাউট’ (প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব) দর্শনের আদর্শে প্রতিষ্ঠিত আধ্যাত্মিকতাভিত্তিক সমাজ রচিত হলেই প্রকৃত নব্যমানবতাবাদের অনুশীলন সম্ভব৷ এছাড়া, প্রাউটের নীতি অনুযায়ী সকল প্রকার ভৌতিক ও মানসিক সম্পদ, মেধাসম্পদের সর্বাধিক উপযোগ গ্রহণ করে ব্লকভিত্তিক পরিকল্পনার মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণ স্থানীয় সামাজিক-অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘটন করতে হবে৷ এর দ্বারা অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা ও সকলের ১০০ শতাংশ কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করা যাবে৷ উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থা উভয়েই সমবায়ের (উৎপাদন সমবায় ও উপভোক্তা সমবায়) দ্বারা পরিচালিত হলে শোষণের সম্ভাবনা নির্মূল হবে ও জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে৷ আধ্যাত্মিকতায় সমুন্নত, নীতিবাদে প্রতিষ্ঠিত, আপোষহীন বলিষ্ঠ চারিত্রিক গুণাবলী বিশিষ্ট সদ্বিপ্রগণের দ্বারাই সমগ্র সমাজ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হতে হবে৷ সেই সমাজ ব্যবস্থায় বর্তমানের প্রবল প্রতাপান্বিত দুর্নীতিগ্রস্ত, হিংসা ও বিদ্বেষ বিভাজনের ধবজাধারীদের কোনও স্থান বা ভূমিকা থাকবে না৷ তাই প্রচলিত পঁুতিগন্ধময় চরম হতাশাগ্রস্ত, হিংসা জর্জরিত, অমানবিক সমাজ ব্যবস্থা থেকে স্থায়ী পরিত্রাণের লক্ষ্যে সকল মানুষকে ‘প্রাউট’ দর্শনের প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতিমুক্ত, ‘শোষণহীন’ সমাজ রচনার জন্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতেই হবে৷ আর তখনই আগামী প্রজন্মের হাতে ঐক্য সংহতিপূর্ণ সার্বিক সম্প্রীতির পরিবেশে সকলের বাসযোগ্য সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা উপহার দেওয়া সম্ভব হবে৷