প্রভাতী

মনুষ নহীঁ, দেওতা হ্যায়

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

তোমরা এমন কিছু কিছু মানুষ নিশ্চয় দেখেছ যাদের শরীরে মায়ামমতা অত্যন্ত বেশী৷ বিপদে আপদে সবাই তাঁদের দ্বারস্থ হয়, তাঁরাও বিপন্ন মানুষকে বাঁচাবার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকেন৷ নিজেকে বিপদে ফেলেও অন্যকে বাঁচাবার চেষ্টা করেন৷ একটি ঘটনার কথা মনে পড়ল৷

সেটি ১৯৪৬–৪৭ সালের কথা৷ ভারতে নানান স্থানে তখন সাম্প্রদায়িকতার কৃশাণু জ্বলছে৷ এই আগুন জ্বালাতেন বা জ্বালিয়েছিলেন রাজনৈতিক নেতারা৷ আমি তাঁদের জন্যে ঘৃণা সূচক পলিটিক্যাল পিগ (হ্মপ্সপ্তন্ব্ধন্ন্তুত্র হ্মন্ন্ধ) শব্দটি ব্যবহার করেছিলুম৷ তাদের কাছে মানুষের জীবনের দাম ছিল না৷ তাদের উদ্দেশ্য ছিল যে কোন পন্থায় তাদের রাজনৈতিক মতলব হাসিল করা৷ এজন্যে মানুষ মরে মরুক....শান্তির নীড় গ্রামগুলি ওই আগুনের লেলিহান শিখায় জ্বলে জ্বলুক, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধি ছিল তাদের কাছে সবচেয়ে বড় কথা৷ আমরা যে পাড়াটিতে থাকতুম সেটি ছিল সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু দুই সম্প্রদায়েরই বাসভূমির সীমান্তরেখা৷ আমাদের বাড়ীটি ছিল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাড়ার শেষ হবার কয়েক পা মাত্র দূরে৷

স্থানটি বিহারের একটি ছোট্ট শহর৷ তখন সন্ধ্যেবেলা৷ একজন বাংলাভাষী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক সিল্কের লুঙ্গি বেচতে আমাদের পাড়ায় প্রায় ঢুকে পড়েছিল৷ আমরা তাকে তাড়াতাড়ি আমাদের পাড়া ছেড়ে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত পাড়ায় চলে যেতে বললুম৷ আমাদের বাড়ী থেকে প্রায় একশ’ হাত দূরে৷ লোকটি ছিল ময়মনসিং জেলার৷ একে বিহারে সে কখনও আসেনি, তার ওপর এখানকার ভাষাও সে ভাল জানত না৷ সে বললে–‘‘কি করে যাব কর্ত্তা, সেখানে তো আমার জানা–চেনা কেউ নেই৷’

আমার এক অতি নিকট আত্মীয় ওই সময় আমাদের বাড়ীতে ছিলেন৷ তিনি তার হাত ধরে টেনে আমাদের বাড়ীতে ঢুকিয়ে নিলেন৷ লোকটি তখন ভয়ে কাঁপছে৷ চারিদিকে দাঙ্গা–কাজিয়া তখন চরম অবস্থায় পৌঁছেছে৷ সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের লোকেরা আমাদের বাড়ীতে এসে বললে–সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকটিকে তোমাদের বাড়ীতে ঢুকতে দেখেছি, তোমরা ওকে আমাদের হস্তে সমর্পণ করো৷

আমাদের সেই আত্মীয়টি তখন বাড়ী থেকে রাস্তায় বেরিয়ে এলেন৷ তিনি সংখ্যাগুরু ওই বিরাট রণোন্মত্ত বাহিনীকে বললেন–লোকটিকে আমিই বাড়ীতে ঢুকিয়ে রেখেছি৷ লোকটি বিপন্ন৷ তোমরা যদি লোকটিকে চাও আমি তাকে তোমাদের হস্তে সমর্পণ করতে রাজী আছি–একটি সর্ত্তে৷ তোমরা আমাকে এখনই মেরে ফেল....তারপর আমার মৃতদেহের ওপর দিয়ে চলে যাও ওই বাড়ীতে....লোকটিকে বাড়ী থেকে বার করে আনো৷ যতক্ষণ আমি বেঁচে আছি ততক্ষণ আমি তোমাদের ওই লোকটির কাছে যেতে দোবনা–তা সে সংখ্যায় তোমরা হাজারই হও, লাখই হও৷ আক্রমণকারীরা বলতে বলতে গেল, ‘‘দেওতা হ্যায়৷’’ (শব্দ–চয়নিকা, ১৩শ খণ্ড)

বাংলার গৌরব - রাধা গোবিন্দ কর (আর.জি.কর)

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

না, সম্প্রতি আর.জি.কর হাসপাতালের জঘন্য নারকীয় ঘটনা এ নিবন্ধের আলোচ্য বিষয় নয়৷ আর.জি.কর হাসপাতালের যিনি প্রতিষ্ঠাতা আর.জি.কর অর্থাৎ ডাক্তার রাধা গোবিন্দ কর---তাঁকে নিয়েই এখানে আজ বিস্তর আলোচনা করবো৷

রাধা গোবিন্দের জন্ম ২৩শে আগষ্ট,১৮৫২ সালে হাওড়া জেলার সাঁতরাগাছিতে৷ পিতা দুর্র্গদাস কর৷ চিকিৎসা শাস্ত্র পড়া শেষ করে ১৮৮৩ খ্রীষ্টাব্দে তিনি ইয়ূরোপ যাত্রা করেন৷ ১৮৮৭ খ্রীষ্টাব্দে এডিন ধরায় চিকিৎসা শাস্ত্রে ডিগ্রী লাভ করেন৷

১৮৭৩ খ্রীষ্টাব্দে ২৯শে মার্চ মেয়ো হাসপাতালের সাহায্যার্থে টাউন হলে ধর্মদাস বাবুর দল নীলদর্পন নাটক মঞ্চস্থ করেন৷ নাটকে উড সাহেবের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ আর সৈরিন্ধীর চরিত্রে অভিনয় করেন ডাঃ রাধা গোবিন্দ কর৷ ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে এই রাধাগোবিন্দ করই ক্যালকাটা স্কুল অব মেডিসিন নামে চিকিৎসাবিদ্যায় প্রশিক্ষণ দেবার জন্য একটি শিক্ষায়তন প্রতিষ্ঠা করেন৷ ১৭বছর স্কুলটি ভাড়া বাড়িতে থাকার পর ১৯০৩ খ্রীষ্টাব্দে স্কুলটিকে অ্যালবার্ট ভিক্টর হসপিটালে স্থানান্তরিত করা হয়৷ ওই বছর আর.জি. কর ঐ হাসপাতালের অবৈতনিক সম্পাদক হিসাবে সাধারণের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে এক আবেদন করেছিলেন৷ সংক্রামক ব্যাধিগ্রস্ত রোগীদের জন্য ১২টি শয্যার একটি ওয়ার্ড খেলার জন্য তিনি সাহায্যপ্রার্থী হয়েছিলেন৷ ১৯০৩ খ্রীষ্টাব্দেই আর.জি.করের স্কুলের সঙ্গে কলেজ অব ফিজিসিয়ানস্‌ এ্যাণ্ড সারজেনস মিশে গিয়েছিল৷ ১৯১৬ খ্রীষ্টাব্দের ৫ই জুলাই তৎকালীন বাংলার গভর্নর লর্ড কার মাইকেল নতুন হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন৷ তখন হাসপাতালটির নামকরণ করা হয় ‘কার মাইকেল মেডিকেল কলেজ’৷ পরে ১৯৪৮ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসে এই নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ হয় আর.জি.কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল৷ তাঁর রচিত কয়েকটি উল্লেখ্যযোগ্য গ্রন্থ---ধাত্রীসহায়, অ্যানটমি, কর-সংহিতা, সংক্ষিপ্ত ভৈষজ্য তত্ত্ব, রোগীপরিচর্যা, নূতন ভৈষজ্যতত্ত্বে, প্লেগ, স্ত্রী রোগ চিকিৎসা প্রভৃতি৷

অনন্ত রহস্য

লেখক
আচার্য প্রবুদ্ধননন্দ অবধূত

সৃষ্টির মহিমা, অনন্ত গরিমা

অহরহ বহে চলে,

কে কি ভাবে ভাবের সাগরে,

কোন দ্বিধা নাই তাঁর বলে৷

আপন ছন্দে আপন সৃষ্টি ,

সকলের তরেই তাঁর প্রকাশ,

নিজ গুণে তিনি সদাই শ্রেষ্ঠ,

অপরূপ তাঁর অভিপ্রকাশ৷

অণু পরমাণু আব্রহ্মস্তম্ব নিত্য

নোতুন সৃষ্টির ধারা,

মহাকাশ, বায়ু-বলয়ে জ্যোতির

ছটায়ে নক্ষত্র গ্রহ রাশি নাচে তারা৷

সমুদ্র সাগর নদী খাল বিল

সবেরই আছে উপযুক্ত উপযোগ,

বিনা অর্থে নাহি তাঁর সৃষ্টির প্রকাশ,

এমনই শিল্পী তিনি, অপরূপ অনুযোগ৷

মানুষ সৃষ্টির সর্ব শ্রেষ্ঠ জীব,

যদি সে সংযোগ রাখে তাঁর সাথে,

অনন্ত অপার করুণার ধন পায়

সে যদি ধ্যান যোগে রহে একসাথে৷

নহিলে এ জীবন বৃথা আস্ফালনে

হইবে নিষ্ফল অপচয়,

মায়ার বন্ধনে রবে চির আবদ্ধ,

কাঁদিবে চিরকাল, দূর হোক এ সংশয়৷

নুতন-পুরাতন

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

পুরাতন হয়ে গেছে হারিকেন--

পুরাতন হয়ে গেছে কালি-ঝরা পেন,

পুরাতন হয়ে গেছে তালপাতার পাখা,

ধূলোর আস্তরণে অবহেলায় ঢাকা৷

পুরাতন হয়ে গেছে হেঁসেলে শিল-নড়া,

পুরাতন হয়ে গেছে জল রাখা ঘড়া৷

সংসারে পুরাতন পিতা, পিতামহ,

হাঁপানি কাশিতে তারা ভূগে অহরহ৷

নব প্রজন্ম ভাবে বুঝি চলে গেলে বাঁচি,

এদের সেবার তরে মোরা বেঁচে আছি!

পুরাতন হয়না কেন আকাশের চাঁদ ,

সবারে ভাগ্ণে বলে পেতেছে সে ফাঁদ!

রবি মামা সব যুগে সবার মাতুল,

এ’’ কথা সবার জানা, নয় সেতো ভূল!

এদের মুখে দেখি নাই বয়সের ছাপ,

হাসি মুখে আলো দেয়, দেয় উত্তাপ!

আকাশের তারাগুলি মিটি মিটি চায়,

নীরব সাক্ষী তারা, সব দেখে যায়৷

বয়স্ক পাকা মাথা হোকনা প্রাচীন,

তবু তার অভিজ্ঞতা নয় অর্বাচীন৷

যা ভাবছ তা নয়

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

‘মৃগী’ শব্দের একটি অর্থ হচ্ছে একটি স্নায়ু–সংক্রান্ত মানসিক ব্যাধি, ইংরেজীতে ন্দ্বহ্মন্প্তন্দ্বহ্মব্দ্৷ যদি কোনো কম বয়সের ছেলে বা মেয়ে হঠাৎ কোনো অভাবনীয় কিছু দেখে বা শোনে তাহলে অনেক সময় তার স্নায়ুর ওপর বা মনের ওপর হঠাৎ একটা ৰড় রকমের চাপ এসে পড়ে৷ সেই চাপ সে যদি সহ্য করতে না পারে তখন তার এই মৃগী রোগ দেখা দেয়৷ যেমন ধরো, একটি ১২/১৪ বছরের ছেলের ধারণা ছিল, অমুক লোকটি কোনো নেশার ধারেকাছে যান না৷ হঠাৎ সে দেখলে সেই সংশ্লিষ্ট লোকটি বোতলের পর বোতল মদ খাচ্ছে৷ ফলে তার আগেকার ধারণার ওপর বিরাট একটা হাতুড়ির আঘাত লাগল৷ এর ফলে তার মৃগী রোগ দেখা দিতে পারে৷ কোনো একটি ছেলের ধারণা ছিল যে সে সদ্বংশজাত কিন্তু হঠাৎ সে শুনতে পেলে তার বংশ পরিচয় নেই৷ এই অবস্থায় তার মৃগী রোগ দেখা দিতে পারে৷ মৃগী রোগীর জীবনে স্নায়ুতন্তুর ওপর হঠাৎ কোনো আরামদায়ক পরিস্থিতি এলেই রোগ ফুটে ওঠে৷ কোনো মৃগী রোগীর অনেকক্ষণ ধরে মূত্র ত্যাগের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে৷ কিন্তু উপযুক্ত স্থান না পাওয়ায় মূত্র ত্যাগের সুযোগ পায়নি৷ এখন সে যখন মূত্র ত্যাগের সুযোগ পায় তখন তার স্নায়ুতে একটা আরামের অবস্থা আসে৷ এমন সময় মৃগী রোগী মূত্র ত্যাগ করতে করতে রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ে যায়৷ কোনো মৃগী রোগী হয়তো দারুণ গরমে কষ্ট পাচ্ছে, এমন সময়ে সেই কষ্ট থেকে বাঁচার জন্যে সে পুকুরে বা নদীতে স্নান করতে গেল৷ জলের সংস্পর্শে এসে তার আরাম ৰোধ হল৷ এমন অবস্থায় রোগগ্রস্ত হয়ে সে জলে পড়ে মৃত্যুমুখে পতিত হতে পারে৷ এই কারণে কোনো মৃগী রোগীকে একলা কখনই কোনো জলাশয়ে স্নান করতে যেতে দিতে নেই৷

‘মৃগী’ প্রসঙ্গে একটা গল্প মনে পড়ল৷ একবার কৃষ্ণনগরের এক পাঁড় মাতাল ৰেশী মদ খেয়ে বেসামাল হয়ে রাত্তিরটা নালীতে শুয়ে কাটালে৷ শেষ রাতের মিষ্টি মিষ্টি ফুরফুরে হাওয়া ও ঠান্ডা নালীর জলের মধুর স্পর্শে তার নেশার ঘোর যখন কিছুটা কেটে গেল সে চোখ মেলে চেয়ে দেখলে তাকে ঘিরে লোকের ভীড় জমেছে৷ তার তখন একটু একটু লজ্জা করতে লাগল৷ সে আবার চোখ বুজে ফেললে৷ খানিক বাদে আবার সে চোখ খুলে চাইল৷ চেয়ে দেখলে ভীড়ের লোকেদের ভেতর তার বেয়াই মশায়ও (বৈবাহিক) রয়েছেন৷

এবার তার লজ্জার মাত্রা গেল আরও ৰেড়ে৷ বেয়াই তাহলে আসল ব্যাপারটা জেনেই ফেলেছে৷ এবার কী হবে! সে তখন বেয়াইয়ের দিকে চেয়ে বললে–বেয়াই, ও বেয়াই, বেয়াই গো, শুনছ, তুমি যা ভাবছ এটি তা নয়–এ আমার মৃগী রোগ৷ (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের ‘গল্প সঞ্চয়ন’ থেকে)

অদৃশ্য হাত

লেখক
আচার্য গুরুদত্তানন্দ অবধূত

কালবৈশাখীর ঝড়ের মত

বিদ্যুত গতিতে তুমি এলে,

সরিয়ে রিক্ততা দিলে পূর্ণতা,

গড়লে মানুষ মানবতার

মহান আদর্শে৷

গড়ে উঠল মিশন তোমার নেতৃত্বে,

একান্ত আপন

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

তুমি স্রষ্টা, প্রতিপালক,

তুমি পরিত্রাতা, তোমার চরণে

শতকোটি নমি,

তুমি পরমপিতা৷

তব করুণায় তোমাকে জেনেছি,

সারাৎসার তোমাকে মেনেছি

সর্বদা সাথে তাও বুঝেছি

যুগ যুগ ধরে শুধু তোমা তরে

চাপা আছে ব্যাকুলতা৷

যে কথাটি আজও হয়নি ব্যাক্ত

সে কথাকি তবে অশ্রুসিক্ত!

সবখানে নয় অভিব্যক্ত

তাই প্রকাশের আকুলতা৷

ছোট ছোট কথা ছোট ছোট ভাব

অঞ্জলী দিয়ে গড়ি সদ্ভাব,

সৃষ্টির মাঝে তব আবির্ভাব

নানা রূপে রঙে তোমারি আভাস৷

বিপদে সম্পদে আছ পাশে পাশে,

পুষ্প কোরকে ফুলের সুবাসে

রাকার আলোয় দখিনা বাতাসে

তোমার প্রেমের স্নিগ্দ প্রকাশ৷

শতরূপে দেখি তোমার হাসি,

কোন নীপবনে বাজাও বাঁশি

দখিনা পবন হয় উদাসী

এ কোন আকর্ষন!

কীর্তনে গানে সাধনে ভজনে

করি ভাব আহরন,

যে ভাব-তরঙ্গে সর্ব অঙ্গে

অনুভবি শিহরণ৷

মননে তোমার নিত্য লীলা

এ কোন বৃন্দাবন!

ভয়

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

পথে যেতে যেতে থমকে দাঁড়াই

দেখি পিছে তুমি আছো কিনা---

সোয়াস্তি নাই, নাইকো শান্তি

ক্ষণে ক্ষণে থামে মনোবীণা৷

ধূলি ধুসরিত পথে যাই হেঁটে,

চলার ছন্দ শুধু যায় কেটে,

এলোমেলো যত ভাবনার দায়ে

নিজেরেই নিজে করি ঘৃণা৷

মনের দেউলে খুঁজি গো তোমায়,

তোমা হতে যে গো গেছি সরি,

যত দূরে যাই পিছু ফিরে চাই

হারিয়ে তোমায় কেঁদে মরি৷

মুদিত নয়নে শয়নে স্বপনে

ধরিতে চাই গো তোমায় মননে

বড় ভয় জাগে পাছে যাও চলে

দেখি পিছে তুমি আছো কিনা৷

 

ইটালিয়ান সেলুন

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

ক্ষৌরকার্য জলের সাহায্যে নির্বাহিত হত ৰলে ক্ষৌরী বা ক্ষৌরকার্যকে প্রাচীন সংস্কৃতে ‘আপ’ ৰলা হত৷ ‘অপ্’ মানে জল৷ তার থেকে ‘আপ’৷ এই ‘অপ্’ থেকে ফার্সীতে ‘আৰ্’৷ পন্জূআৰ্ঞ্চ পঞ্জাৰ্৷ ফার্সীতে ‘পন্জ্’ মানে পাঁচ৷ জলের সাহায্য ব্যতিরেকে খুৰ কম কাজই করা যায়৷ তাই সংস্কৃতে ব্যাপকার্থে ‘আপ’ মানে সৰ রকমেরই কর্ম৷

          যস্মিন্নাপো মাতরিশ্বা দধাতি–(বেদ)

বিশেষার্থে ‘আপ’ মানে দাড়ি কামানো৷ ঠিক তেমনি ‘বা’ ধাতু ‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘ব’ শব্দ পাই তারও একটি অর্থ হ’ল ক্ষৌরকার্য৷

‘ব’ ৰলতে গিয়ে একটা ছোট্ট গল্প মনে পড়ল৷ তোমরা ৰাগৰাজারের গঙ্গার ঘাটে গিয়ে দেখেছ নিশ্চয়, সারি সারি নাপিত ৰসে রয়েছে৷ যার দাড়ি কামাবার আছে সে উবু হয়ে ৰসে পড়ছে, আর নাপিত–ভায়া তার ‘ব’–কাজ করে দিয়ে যাচ্ছে৷ সময়ে সময়ে ৰন্ধুর দিকে তাকিয়ে ৰলছে–এই নিয়ে আঠাশটা দাড়ি হ’ল৷ আর দু’টো দাড়ি হলেই বাড়ী ফিরছি৷ রেস্তোরাঁয় যেমন শুণতে পাও, ‘ওই দিকে চারটে চা নিয়ে যা’৷ যাই হোক্, কোনো ৰনেদী লোক এসে পৌঁছুলে নাপিত–ভায়া তখন তাকে ৰসবার জন্যে ইট অফার করত৷ এই ইটে বসে দাড়ি কামানোকে ৰলা হত ইটালিয়ান সেলুন৷

১৯৩৯–৪০ সাল অবধি দেখেছি যাঁরা উবু হয়ে বসে দাড়ি কামাতেন নাপিত–ভায়া সাধারণ ঠান্ডা জল দিয়ে তাঁদের দাড়ি কামিয়ে দিতেন আর দক্ষিণা নিতেন এক পয়সা৷ আর যাঁরা ইটালিয়ান সেলুনে ৰসতেন তাঁদের সাৰান–মিশ্রিত গরম জল দিয়ে দাড়ি কামিয়ে দেওয়া হত৷ নাপিত–ভায়া তাঁদের কাছে প্রণামী নিতেন দু’পয়সা৷

এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল গেঁজেলদের গল্প৷ যখন কোনো নবাগত, গেঁজেল হবার জন্যে শিক্ষানবিশ (এ্যাপ্রেন্টিস) হিসেৰে গেঁজেল ক্লাৰের সদস্য হয় তখন গোড়ার দিকে তাকে উৰু হয়ে ৰসে গাঁজায় দম টানতে হয়৷ এই উৰু হয়ে ৰসা অবস্থায় তাদের ৰলা হয় উৰু–গেঁজেল বা এ্যাপ্রেন্টিস–গেঁজেল৷ তারপর গেঁজেলদের যোগ্যতার একটা পরীক্ষা হয় যাকে ৰলতে পারো যোগ্যতা–পরিমাপক পরীক্ষা (suitability test or efficiency test) সেই যোগ্যতা–পরীক্ষায় যে উত্তীর্ণ হয় সে তখন থেকে বসবার জন্যে ইট পায়৷ ইটে বসার পর থেকে আর তাকে উৰু–গেঁজেল ৰলা হয় না–ৰলা হয় ইটালিয়ান গেঁজেল৷ একবার ভাগীরথীর তীরে (ডান তীর না বাঁ তীর মনে পড়ছে না৷ ডান তীর হলে ৰর্দ্ধমান জেলা, বাঁ তীর হলে নদীয়া জেলা) গেঁজেলদের সভা ৰসেছে একটা মাদার*(*কলকাতায় আমরা ৰলি মাদার, ২৪পরগণা ও মেদিনীপুর জেলায় ৰলে ড্যাফল৷ রাঢ়ের কোথাও কোথাও ৰলে ডেলো বা ডাউয়া৷ খণার বচনে আছে–‘‘শোণরে ৰলি চাষার পো৷ বাঁশ ৰনের ধারে মান্দার রো৷’’ রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, ‘‘আঁধার হল মাদার গাছের তলা৷’’) গাছের তলায়৷ অনেকগুলো উৰু গেঁজেল ক্রমাগত দাবী জানিয়ে আসছিল–তাদের যোগ্যতার পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে না৷ এর ফলে তাদের ইটালিয়ান গেঁজেল হবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে৷ এতে তাদের প্রতিভাকে দাৰিয়ে রাখা হচ্ছে, মানবতার বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে৷ গেঁজেল–সর্দার ছিলেন শ্রীযুক্ত ৰাৰু দমফাটা সিং৷ তিনি ৰললেন–‘‘ঠিক আছে, তাহলে আজকেই পরীক্ষাটা হয়ে যাক্৷’’

দমফাটা সিং ৰললেন–‘‘গাঁজার প্রথম টান দেবার সময়েই একটা ভাব নিতে হৰে৷ কার ভাবটি কতখানি মঞ্চসার্থক হচ্ছে তারই ভিত্তিতে তাকে খেতাৰ দেওয়া হৰে ও ইট দেওয়া হৰে৷’’

গেঁজেলরা ৰললে–‘‘একটু ৰুঝিয়ে ৰলুন, আরও একটু খোলসা করে, একটু ব্যাখ্যা করে ৰলুন৷ তাতে আমাদের খোলতাইটা মানাৰে ভাল, মৌতাতটা শানাৰে ভাল৷’’

সর্দার গেঁজেল ৰললে–‘‘এই ধরো, কেউ গোরুর ভাব নিলে৷ তার সামনে যদি একশ’ টাকার নোট রাখা হয় সে সঙ্গে সঙ্গে নোটটা চিৰোতে থাকৰে, মাথা নাড়তে থাকৰে, শিঙ্ দিয়ে গুঁতোতে যাৰে আর হাম্বা হাম্বা আবাজ করতে থাকৰে৷ কেউ শো’রের ভাব নিলে৷ সে সঙ্গে সঙ্গে কাছাকাছি জায়গায় যত কচুগাছ দেখবে আর মুখে আবাজ করতে থাকৰে ‘‘ঘোঁৎ ঘোঁৎ ঘোঁৎ–রতনে রতন চেনে শো’রে চেনে কচু.......ঘোঁৎ ঘোঁৎ ঘোঁৎ৷ কেউ হয়তো ভোঁদড়ের ভাব নেৰে৷ সে সামনের হাত দু’টো পায়ের মত করে ছুটতে ছুটতে জলে ঝাঁপ দেৰে আর মুখে করে মাছ ধরৰে৷ নাম জিজ্ঞেস করলে ৰলৰে, ‘‘ভোঁ...ভোঁ...ভোঁ৷’’ গেঁজেলদের ভাষায় একে ৰলা হয় ভাব নেওয়া৷’’

সৰ যখন তৈরী, পরীক্ষারম্ভের ঘণ্টী যখন ৰাজে ৰাজে এমন সময় উৰু–গেঁজেল ঘণ্টাকর্ণ ঘোড়ইয়ের পিতৃদেব লম্বাকর্ণ হঠাৎ সেখানে এসে হাজির ৷ কম বয়সে তারও গেঁজেল–জীবনের অভিজ্ঞতা ছিল৷ তাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে সর্দার–গেঁজেল দমফাটা সিং ঘণ্টাকর্ণকে ৰললে–‘‘ওই দেখ, তোর ৰাপ্ আসছে৷ তুই এখন যদি মানুষ সেজে থাকিস তাহলে তোকে কথার উত্তর দিতে হৰে৷ তাই তুই এখন তাড়াতাড়ি কোনো পশু–পক্ষী বা জন্তু–জানোয়ারের ভাব নিয়ে নে৷’’ ঘণ্টাকর্ণ সঙ্গে সঙ্গে টিয়াপাখীর ভাব নিয়ে নিলে৷ লম্বাকর্ণ এসে ৰললে–‘‘চল্ ঘণ্টাকর্ণ, বাড়ী চল্৷ সারাদিন শুধু টো টো করে ঘুরে ৰেড়ানো আর গাঁজা খাওয়া৷ এখন চাষের সময়.......ধান রোয়ার কাজ চলছে, বাড়ী চল্৷ ঘণ্টাকর্ণ মুখটা ছুঁচলো করে টিয়াপাখীর মত কুট কুট করে ছোলা কাটতে লাগল আর ৰলতে লাগল–‘‘ট্যাঁ ট্যাঁ ট্যাঁ’’৷

লম্বাকর্ণ ৰললে–‘‘ঢ়ঙ শিখেছে ! টিয়াপাখীর ভাব নিয়েছে! দেখাচ্ছি মজা!’’ লম্বাকর্ণ তখন মুখে করে ঘণ্টাকর্ণের ঘাড়টা কামড়ে ধরলে আর তারপর হুলো বেড়ালের ভাব নিয়ে ৰললে, ‘‘ম্যাঁও, ম্যাঁও, ম্যাঁও৷’’

ঘণ্টাকর্ণ তো টিয়াপাখী সেজেছে৷ ৰেড়াল তার ঘাড় ধরেছে৷ তাই সে আরও একবার ট্যাঁ ট্যাঁ শব্দ করে ঘাড়টি কাৎ করে নেতিয়ে পড়ল৷ ৰেড়ালরূপী লম্বাকর্ণ টিয়াপাখীরূপী ঘণ্টাকর্ণকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেল৷

যাইহোক্ দাড়ি কামানোর কথা ৰলতে গিয়ে ইটালিয়ান সেলুনের কথা এসে গেল আর সেই প্রসঙ্গে এসে গেল ইটালিয়ান গেঁজেলের কথা৷ তোমরা সুযোগ পাও তো একবার দমফাটা সিংয়ের কাছে গিয়ে খোঁজ নিও৷ এই ঘটনার পরে ঘণ্টাকর্ণ গেঁজেল সভায় আর আসত কিনা বা এসে থাকলে সে ইটালিয়ান গেঁজেল ৰলে গণ্য হয়েছিল কিনা, হ্যাঁ, জেলাটা ৰর্দ্ধমান না নদীয়া, সেটাও সেই সঙ্গে খোঁজ নিয়ে রেখো৷

অবনীন্দ্রনাথ (জন্মদিন---জন্মাষ্টমী)

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর

এমন দিনেই অবন ঠাকুর,

এসেছিলে মোহন তুলি হাতে

রঙে জলে রূপের খেলা

খেলে খেলে কাটতো বেলা

মৌন বাণী ফুটতো রেখার সাথে৷৷

কোথায় ডাকে ইষ্টিকুটুম,

পায়রা নাচে বাকুম বুকুম,

কাঠঠোকরা কোথায় ঠোকে কাঠ--

রাখতে এ’কে বুলিয়ে তুলি

নাওয়া খাওয়া নিদ্রা ভুলি

ফসল ভরা সবুজ সতেজ মাঠ৷৷

হাসিখুশির গল্প বলে

কচি কচি শিশুর দলে

থাকতে তুমি ফেলে সকল কাজ

‘ক্ষীরের পুতুল’ ‘রাজকাহিনী’

সবারই মন নেয় যে জিনি

আসন তোমার তাইতো সবার মাঝ৷

শুনিয়ে গেছো মিষ্টি ছড়া---

প্রাণ নাচানো ছন্দে ভরা---

অবাক করা মজার আজব কথা৷

খুচুর খুচুর সারাটা দিন

গড়তে মডেল কতই রঙিন

কাজের মাঝেই পেলে অমরতা৷৷