ধর্মের বেনামীতে যে মধ্যযুগীয় কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ও বহুক্ষেত্রে বর্বরতা আজও চলছে, তারই প্রমাণ মিলল সাম্প্রতিক সংবাদে প্রকাশিত অসমের একটি ঘটনায়৷
ঘটনাস্থল অসমের উদালগুড়ি জেলার কলাইগাঁও গ্রাম৷ এই গ্রামের এক শিক্ষক যাদব শহরিয়া৷ কিছুদিন আগে তাঁর মেয়ে আত্মঘাতী হয়েছে, স্ত্রী মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন৷ এই পরিস্থিতিতে এক অবিদ্যাতান্ত্রিক, নাম রমেশ শহরিয়া, তাদের বলে যে, তাদের বাড়ীর ওপর অশুভশক্তির প্রভাব পড়েছে৷ এই অশুভ শক্তির কবল থেকে মুক্ত হতে ওই অবিদ্যাতান্ত্রিক ‘শিশুবলি’র দাওয়াই দেয়৷ ওই অবিদ্যাতান্ত্রিকের সামনে ওই শিক্ষক, তাঁর স্ত্রী, ছেলে, দুই শ্যালক ও দুই শ্যালিকা তাদের এক কিশোর ছেলে সবাইকে কোনো মাদকজাতীয় দ্রব্য খাওয়ায়৷ তারপর ওই আটজন স্বাভাবিক জ্ঞান হারিয়ে ওই অবিদ্যাতান্ত্রিকের নির্দেশ অনুসারে নগ্ণ হয়ে নৃত্য করতে থাকে৷ এরপর তাদেরই একজনকার তিন বছরের এক শিশুকে বলি দেওয়ার উদ্যোগ করে৷
গ্রামবাসীরা এই ঘটনার কথা জানতে পেরে শিশুটিকে উদ্ধার করার চেষ্টা করলে উন্মত্ত ওই শহরিয়া পরিবারের লোকেরা দা-কুড়ুল, ইট-পাথর নিয়ে তাদের আক্রমণ করে৷ দু-জন সাংবাদিককেও আক্রমণ করে৷ পুলিশ এসে বাধ্য দিয়ে ওই শিক্ষক, তার ছেলে ও শ্যালকের পায়ে গুলি করে তাদের কাবু করে৷ তাদের আটক করে হাসপাতালে পাঠানো হয়৷ গুলিতে পুলকেশের গুরুত্বপূর্ণ এক ধমনী ছিন্ন হওয়ায় হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়৷ বাকীদের গ্রেফতার করা হয়েছে৷ শিশুটিকেও উদ্ধার করা হয়৷
ধর্মের নামে এমনি বহু অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার সহ নানান্ যুক্তিহীন ও কোথাও কোথাও নানান পাশবিক ও বর্বরোচিত কার্যকলাপ এখানে ওখানে চলেছে৷ এই কারণে সর্বত্র ধর্মের নিন্দা হচ্ছে৷
রাক্ষ্মসরাজ রাবণ সাধুবেশে সীতাহরণ করেছিল৷ সাধুবেশী এইসব চোর ভণ্ড বদমাশদের জন্যেই সাধুর বদনাম হচ্ছে৷ ঠিক তেমনি ধর্মের নামাবলি গায়ে দিয়ে একদল কায়েমী স্বার্থবাদী মানুষ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যে নানান্ অজ্ঞতা, কুসংস্কার , অন্ধবিশ্বাস ও বর্বরতাকে প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে৷ এসব আসলে ধর্ম নয়, ধর্মের সঙ্গে এসবের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই৷ এগুলোকে এককথায় বলা যায় ‘ডগমা’৷ এইসব ‘ডগ্মার’ জন্যে ধর্মের এত বদনাম৷ এই সব ডগ্মা হ’ল আসলে শোষণের জাল, এই ডগ্মার জাল ছিন্ন করতে হবে৷
ডগ্মার প্রভাব থেকে মুক্ত করে মানুষের বুদ্ধিকে স্বচ্ছ করতে হবে৷ মানুষের প্রকৃত জ্ঞানের চোখ খুলে দিতে হবে৷ প্রকৃত ধর্ম-যা মানুষের আত্মশক্তি উৎস--- যা মানুষের প্রকৃত জ্ঞান, বুদ্ধি ও বিবেককে জাগ্রত করতে পারে, যা মানুষের প্রকৃত মনুষ্যত্বের প্রকাশ ঘটায় সেই যোগী মুনি ঋষি মহাপুরুষদের প্রচারিত ধর্ম সম্পর্কে মানুষকে সচেতন হতে হবে৷ অন্ধকারের জাল ছিন্ন করে মানুষের মধ্যে জ্ঞানের আলো জ্বালাতে হবে৷