গণতন্ত্রের ঘাড়ে অনৈতিকতার ভূত
সম্পাদকীয়
- Read more about গণতন্ত্রের ঘাড়ে অনৈতিকতার ভূত
- Log in to post comments
সম্পাদকীয়
একজন প্রাক্তন আর এস এস নেতা বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন আর এস এস ও বিজেপি দলটা চরম বাঙালী বিদ্বেষী৷ দিল্লির ক্ষমতায় মোদি বসার পর থেকে বিজেপির বাঙালী বিদ্বেষী চরিত্রে আর কোন রাখ-ঢাক নেই, দিন দিন নগ্ণ হয়ে পড়ছে৷ এমন কি যদি কোন দিন বিজেপির স্বপ্ণের হিন্দু রাষ্ট্র গঠিত হয়, সে রাষ্ট্রে হিন্দু বাঙালীরও স্থান হবে না৷
ধর্ম নয়, কোন একটি ধর্মমত যখন রাজনীতির হাতিয়ার হয়, তখন সেই রাজনীতিতে রাষ্ট্রের কল্যাণ দূরে থাক, সামান্য মানবিকতার স্পর্শও থাকে না৷ ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের মর্যাদা রক্ষা হয় না৷ স্বাধীন খণ্ডিত ভারতের জন্মই হয়েছে ধর্মমতাশ্রিত সাম্প্রদায়িক হানাহানির গর্ভে৷ সেই স্বাধীনতা কোটি কোটি মানুষের কাছে অভিশাপ স্বরূপ৷ স্বাধীনতার ৭৭ বছর অতিক্রম করেও ভারত সেই অভিশাপ থেকে মুক্ত হলো না৷ হওয়ার কথাও নয়৷ কারণ ধর্মমতাশ্রিত দুই সম্প্রদায়ের বাইরে আরও দুটি সম্প্রদায় ছিল৷ তারাই স্বাধীন ভারতের দুণ্ড-মুণ্ডের কর্তা---শাসক ও শোষক সম্প্রদায়৷ পরাধীন ভারতে রাজনীতির মঞ্চ থেকে সুভাষচন্দ্রের বেদনাদায়ক বিদায়ের পশ্চাতের ছিল এই সম
বঙ্গ রাজনীতিতে মুখোশের আড়ালের মুখগুলো ক্রমশ বেরিয়ে আসছে৷ হতাশা গ্রাস করেছে এক শ্রেণীর নেতাদের৷ কারণে অকারণে মেজাজ হারাচ্ছে৷ হাব-ভাব - বাচন - ভঙ্গীমায় - ভাষায় শালীনতা বজায় থাকছে না৷ আসলে কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মমতকে হাতিয়ার করে উত্তর পশ্চিম ভারতে যে সাফল্য পেয়েছে কেন্দ্রের শাসকদল তার বঙ্গীয় অনুগামীরা সেই পথেই বঙ্গ জয়ের স্বপ্ণ দেখছে৷ কিন্তু বাঙলার সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য ও সর্র্বেপরি এক মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক বিচক্ষনতার কাছে বার বার পরাজিত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারাচ্ছে৷ তবে শুধু ধর্মীয় কারন নয়, বর্তমান রাজনীতি ব্যষ্টিস্বার্থ ও স্বজন পোষণ রোগে আক্রান্ত৷ তাই ব্যষ্টিস্বার্থ সিদ্ধিই যখন রাজনীতির
বর্তমান পৃথিবীতে যত প্রকার রাষ্ট্রপরিচালনার ব্যবস্থা আছে গণতন্ত্র তার মধ্যে ভালো, কিন্তু গণতন্ত্রকে একেবারে ত্রুটিমুক্ত বলা যায় না৷ তবে গণতন্ত্র মধ্যে মন্দের ভালো৷
বর্তমানে ধর্মের নামে নানান ধরণের গোঁড়ামী, জাত–পাতের ভেদ ও সাম্প্রদায়িক বিভেদ ও বিদ্বেষ চলছে৷ অন্ধবিশ্বাস আর কুসংস্কারের জালে জড়িয়ে আঁতুড় ঘর থেকে শশ্মানঘাট পর্যন্ত শোষনের জাল বোনা হয়েছে৷ অপ্রয়োজনীয় সামাজিক আচরণের বোঝাকে ধর্মের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলে বলা হচ্ছে৷ অন্ধবিশ্বাস আর ভাবজড়তায় আচ্ছন্ন মানুষ কতটা বিবেকহীন অমানবিক হতে পারে তথাকথিত মহাকুম্ভে তা দেখালো অন্ধবিশ্বাসে আচ্ছন্ন মানুষ৷
দেশের বর্তমান সরকারের সবকিছুকে এক করে দেওয়ার একটা প্রবণতা আছে৷ এক ভাষা, এক দেশ, এক ধর্মমত এই প্রবণতার শেষ সংযোজন এক দেশ এক নির্বাচন৷ এটা বাস্তবায়িত করতে সরকার অনেক বেশী দৃঢ়৷ যদিও সংসদে একক গরিষ্ঠতা না থাকায় সরকারকে থমকে দাঁড়াতে হয়েছে৷ কারণ সরকার চালাতে শরীক দলের মন রক্ষা করেও চলতে হবে৷ এক দেশ এক নির্বাচন--- জোট সরকারের বৃহত্তম শরীকের এই মনভারের সঙ্গে সব শরীক এক নাও হতে পারে৷
অমৃতলাভের আশায় অন্ধ আবেগে ছুটছে উদ্ভ্রান্ত মানুষ মরছে পদপিষ্ট হয়ে৷ মহাকুম্ভে অমৃতলাভের আশায় জনস্রোত নয়াদিল্লি রেলস্টেশন থেকে প্রয়াগরাজ৷ ধর্মের নামে ব্যবসায় মত্ত উত্তরপ্রদেশ সরকার, কেন্দ্র সরকারের সেদিকে দৃষ্টি নেই৷ সরকারের লক্ষ্য সেই সব কোটিপতিদের দিকে৷ তাদের জন্যে লাখো টাকার তাঁবুরের আসা যাওয়ার ভি.আই.পি ব্যবস্থা৷ আর পদপিষ্ট হয়ে যারা অকালে ঝরে গেল তাদের প্রকৃত হিসাব কি সরকারের কাছে আছে৷ তাদের হিসাবকে আর রাখে! যদিও সরকারী হিসেবে মহাকুম্ভের বলি ৫৫ জন৷ কিন্তু সরকারী তথ্য বিশ্বাস করে ক’জন!
ভাষা শহীদদের রক্তে ভেজা পবিত্র মাটিতে আজ ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের বীভৎস উল্লাস৷ ভুলিয়ে দিতে চাইছে বাঙালীর গর্বের ইতিহাস৷ পেঁচা যেমন সূর্যের আলো সহ্য করতে পারে না, তেমনি মানব সমাজেও আছে কিছু দ্বিপদ জীব শোষক রূপে, ধর্মান্ধের বেশে যাদের কালো হাত আজ সমাজের সর্বস্তরে বিস্তৃত৷ সেই কালো হাতের স্পর্শ বিষে জর্জরিত বাঙলার শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্মনীতি৷
মহাকুম্ভের মর্মান্তিক পরিণতি৷ অমৃত লাভের আশায় তথাকথিত ধর্মীয় উন্মাদনার পরিণতিতে কতকগুলো জীবন অসময়ে ঝরে গেল৷ অন্ধবিশ্বাস ও ভাবজড়তায় আচ্ছন্ন জীবনের শেষ পরিণতি কি এভাবেই হয়! আমরা উচ্চকন্ঠে ডিজিটাল ভারতের কথা বলি৷ আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষকে একাত্ম করে তুলতে কত আবেদন নিবেদন, কত বিজ্ঞাপনের বহর৷
পাশাপাশি গোবর গোমুত্র পান থেকে শুরু করে নানা বাস্তব বর্জিত শাস্ত্রীয় বিধান শুনিয়ে মানুষকে তথাকথিত ধর্মমতের হুজুগে মাতিয়ে রাখাও কি ডিজিটাল ভারতের প্রগতি? কোন অমৃতের সন্ধানে মানুষকে মাতিয়ে দিশাহীনভাবে দৌড় করিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়!