ওরা দু’পায়ে দলে, মরণ শঙ্কারে, সবারে ডেকে গেল শিকল ঝংকারে

লেখক
মনোজ দেব

১৮ই এপ্রিল ১৯৩০-বাঙলার সশস্ত্র বিপ্লবের ইতিহাসে রক্তের অক্ষরে লেখা একটি দিন৷ না, সভা-সমিতিতে জ্বালাময়ী বত্তৃণতা দিয়ে নেতা হওয়ার জন্যে নয়, মাতৃভূমির মুক্তির জন্যে আত্মত্যাগের এক দুর্লভ ইতিহাস৷ সাম্রাজ্যবাদী অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসককে যোগ্য জবাব দিতে বাঙলার ঘরে ঘরে তখন নবজীবনের সাড়া৷ একতরফা মার খাওয়ার দিন শেষ৷ সাম্রাজ্যবাদী বিদেশী শাসককে এবার যোগ্য জবাব দিতে হবে৷ পরাধীনতার যন্ত্রণা জাগিয়ে তোলে বাঙলার সুপ্ত যৌবনকে৷ নেতৃত্বের লোভে নয়, দেশের জন্যে স্বাধীনতার জন্যে আত্মত্যাগের, জীবন উৎসর্গের প্রতিদ্বন্দ্বিতা---‘আগে কে বা প্রাণ করিবেক দান, তারই লাগি কাড়াকাড়ি৷’ পরাধীন ভারতবর্ষের ইতিহাসের পাতায় ওই সময়টা চিহ্ণিত অগ্ণিযুগ বলে৷

সেই অগ্ণিযুগের একটি অধ্যায়---চট্টগ্রাম সশস্ত্র বিপ্লব---অস্ত্রাগার লুণ্ঠন---জালালাবাদের যুদ্ধ৷ ১৮ই এপ্রিল ১৯৩০৷ অত্যাচারী শাসককে যোগ্য জবাব দিতে মাষ্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে অনেক আগে থেকেই৷ ওই দিন মধ্যরাতের কিছু আগেই সশস্ত্র বিপ্লবীরা ঝাঁপিয়ে পড়ল পুলিশ লাইনের অস্ত্রাগারে জেলখানায়, ইম্পিরিয়াল ব্যাঙ্কে, থানায়৷ চট্টগ্রামের সর্বত্র৷ কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল সূর্য অস্ত না যাওয়া ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শাসকের বুকে চট্টগ্রামের সূর্য ও তাঁর সহকর্মীবৃন্দ৷ ১৮ই এপ্রিল বাঙলার সেই বীর বিপ্লবীদের বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করার দিন৷

শুধু স্মরণেই কি শেষ হবে কর্তব্য সাধন! বাঙলার অবস্থা আজ সত্যিই মর্মান্তিক৷ ৭৭ বছরে দিল্লির স্বাধীন দেশের সরকারের শোষণ বঞ্চনা নিপীড়ন ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনকেও ম্লান করে দিয়েছে৷ কিন্তু হায়! বাঙালী আজ রাজনৈতিক দলাদলি, সাম্প্রদায়িক হানাহানি, চিয়ার্স গালর্সের ক্রিকেট, অশ্লীল হীনরুচির চলচিত্র গানে মেতে৷ মাত্র ৭৭ বছরেই একটা জাতির ব্যবসা বাণিজ্য শিল্প শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতি সব লাটে তুলে দিয়ে বাঙলার সম্পদে পেট চালাচ্ছে দিল্লির শাসক৷ কিন্তু বাঙালীর কি কিছুই করার নেই৷ আছে, করবেও৷ নতুন করে সামশেরগঞ্জ থেকে যে যন্ত্রণা শুরু হয়েছে এই যন্ত্রণাই নতুন বাঙলা ঘঠনের গর্জনে পরিণত হবে, হবেই!