সার্বিক কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে অর্থনীতিকে বিকেন্দ্রিত পথে বিকশিত করতে হবে

লেখক
প্রাউটিষ্ট ফোরাম

দিশাহীন অর্থনীতি কলুসিত রাজনীতির প্রভাবে সামাজিক অর্থনৈতিক সংরচনা ভেঙে পড়েছে৷ ক্রমবর্ধমান বেকারীর জ্বালায় যুব সমাজ অস্থির৷ পুঁজিপতি নিয়ন্ত্রিত সরকার অক্ষম সমস্যার সমাধানে৷ গ্যাসের দাম বৃদ্ধি জীবনদায়ী ঔষধের মূল্যবৃদ্ধিতে বাজারে হাহাকার পড়েছে৷ আর্থিক বিকাশের সব পথ রুদ্ধ৷

প্রাউটের দৃষ্টিতে সামগ্রিকভাবে মানব জাতির উন্নতি করতে হলে প্রথমেই মানুষের প্রাথমিক চাহিদাগুলি--- অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার সুব্যবস্থা করতে হবে প্রতিটি মানুষের জন্যে৷ মানুষের এই প্রাথমিক চাহিদার পূর্তি না হলে আর্থিক বিকাশ সম্ভব নয়৷

প্রাউট প্রবক্তা পরমশ্রদ্ধেয় শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার বিশ্বের সর্বস্তরের মানুষের, সর্বজীবের তথা সর্ব অস্তিত্বের সার্বিক বিকাশের স্বার্থে অর্থনীতিকে বাস্তবমুখী করতে বর্তমান প্রচলিত ধনতান্ত্রিক আর্থিক ব্যবস্থার খোলনলচে পালটে বিকেন্দ্রিত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ আর্থিক ব্যবস্থার পথে নির্দেষণা দিয়েছেন৷ তিনি অর্থনীতির প্রচলিত দুটি ধারা---সাধারণ অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক অর্থনীতির সঙ্গে আরও দুটি ধারা যোগ করেছেন---গণ অর্থনীতি ও মানস-অর্থনীতি৷

গণ-অর্থনীতির প্রধান কাজই হবে নূ্যনতম চাহিদা ও মানুষের অত্যাবশ্যক দিকগুলির বিষয়ে আলোচনা করা যাতে একটি বাস্তবমুখী আর্থিক পরিকল্পনা গড়ে ওঠে৷ অর্থনীতির এই শাখার কাজ হবে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা পরিবহন ব্যবস্থা, জলসরবরাহ, শক্তির যোগ প্রভৃতি বিষয়গুলি সহজ লভ্য করে দেওয়া৷ মানুষের নূ্যনতম চাহিদা ও ক্রয় ক্ষমতা মৌলিক মানবিক অধিকার হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃত থাকবে৷ কোন নাগরিকের এই চাহিদা পুরণ না হলে তিনি আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবেন৷ গ্রামীন অর্থনীতির বিকাশে, ব্যষ্টিগত ও সামবায়িক সংস্থা পরিচালিত ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশেও পথ নির্দেশনা দেবে গণর্থনীতি৷ এককথায় অনুন্নত দেশের আর্থিক বিকাশে গণর্থনীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে৷

তবে বর্তমান পুঁজিবাদ নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রিত অর্থনৈতিক কাঠামোয় গণর্থনীতির প্রয়োগ সম্ভব নয়৷ এরজন্যে প্রাউট প্রদর্শিত পথে বিকেন্দ্রিত আর্থিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে৷ অর্থনৈতিক সমস্যা, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা, ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ, ভাষা-কৃষ্টি-সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তির ভিন্নতা ও নৃতাত্ত্বিক পরিচয় দেখে জনগোষ্ঠী অনুযায়ী স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে বিকেন্দ্রিত অর্থনীতির বাস্তবায়ন করতে হবে৷

তবে এই আর্থিক ব্যবস্থার বাস্তবায়ন পুঁজিপতি শোষক গোষ্ঠী ও অনৈতিক রাজনৈতিক দলগুলি কোনো ভাবে মেনে নেবে না৷ এতে তাদের কায়েমী স্বার্থে আঘাত লাগবে তাই সুবিধাভোগে শাসকগোষ্ঠী ও শোষক শ্রেণী সর্বতোভাবে বাধা দেবে তাদের নির্দয় শোষনের স্টিমরোলার চালিয়ে যেতে৷

তাই এই শোষণ ও নিপীড়ণ বন্ধ করতে প্রাউটিষ্ট দেরই শোষিত জনগণের হয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের জন্যে৷ জাতি-বর্ণ-ধর্মমত নির্বিশেষে সমস্ত শোষিত জনগোষ্ঠীকে এই আন্দোলনে সামিল করতে হবে৷ মূল লক্ষ্য থাকবে সার্বিক কর্মসংস্থান শিল্প বিকাশ বহির্পণ্যের আমদানি বন্ধ যোগাযোগ ও শিক্ষার মাধ্যম স্থানীয় ভাষা ও স্থানীয় সামাজিক অর্থনৈতিক দাবীপূরণ৷ অবশ্যই এইসব অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলিতে আর্থিক ব্যবস্থা পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে স্থানীয় জনগোষ্ঠী৷ তবেই সম্ভব হবে অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা৷