ত্রিপুরার জম্পুই পাহাড়ে মিজো-ভাষার সাথে বাংলা ভাষা চালু করে সম্প্রীতির বার্তা

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদবাদা, জম্পুই পাহাড়
সময়

শান্তি, সম্প্রীতি ও  বাঙালী-পাহাড়ী ঐক্যের শ্লোগান দিয়ে ভোট ব্যাঙ্ক বাড়াতে রাজনৈতিক দলগুলি সর্বদা কুটকৌশল অবলম্বন করে থাকে  এরফলে লাভ কিছুই হয় না৷ কিছু সুবিধাবাদী রাজনৈতিক নেতা নেত্রীদের কারণে রাজ্যের পাহাড় ও সমতলে প্রায় সময়ই একটা বিভেদের দেওয়াল তৈরী করা হয় বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে৷ বর্তমানে সারাদেশে জাত-পাতের রাজনীতি নিয়ে অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে কিন্তু অসৎ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে গিয়েও মানুষ নিজেরাই একে অপরকে আপন করে নিয়েছে৷ এই উদাহরণ সম্প্রীতি দেখা গেল জম্পুই পাহাড়ে৷ এখানে জাতি-উপজাতি ভেদাভেদের কোন প্রশ্ণই নেই৷ রাজ্যের শৈল শহর হিসেবে পরিচিত জম্পুই পাহাড়ে যেন তৈরী হয়েছে বাঙালী-পাহাড়ীর মৈত্রী সেতু৷ জম্পুইবাসীদের নিজস্ব ভাষা হল মিজো৷ মিজোভাষায় কথা বলে সবাই৷ সম্প্রদায় হিসেবে তাদেরকে বলা হয় লুসাই৷ এদের প্রায় বেশিরভাগই খ্রীষ্টান৷ এদের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষ ইংরাজী জানেন৷ জম্পুই-এ বসবাসকারী ২০ শতাংশ লুসাই সম্প্রদায়ের মানুষ বাংলা ভাষা জানেন৷ কাঞ্চনপুর এলাকার বাংলা ভাষীদের সঙ্গে লুসাইদের মধ্যে পারিবারিক ভাবে যাওয়া আসা রয়েছে৷ তবুও জম্পুই মূলতঃ মিজোপ্রধান অঞ্চল৷ তা সত্ত্বেও বাংলা ভাষাকে প্রাধান্য দিয়ে জম্পুই পাহাড়ে বসবাসকারী লুসাইরা  মিজো ও বাঙালীদের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক সুদৃঢ় করে রেখেছে৷ যেখানে ত্রিপুরারাজ্যের এডিসি এলাকার এক সহকারী প্রতিনিধি সদস্য প্রকাশ্যে বলছেন পাহাড়ী বাঙালী ভাই ভাই হয় না, বন্ধু হয়৷ সেখানে জম্পুই-এ বাঙালী মিজো (লুসাই) ভাই ভাই শ্লোগানটি তাৎপর্যপূর্ণ৷ 

সম্প্রতি জম্পুই-মিজোরাম সীমান্ত এলাকা থেকে ভাঙমুন পাহাড় পর্যন্ত লুসাই গ্রামে ইংরেজি ও মিজো ভাষার সঙ্গে বাংলার ভাষার প্রাধান্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লুসাইরা৷  জম্পুই-এর প্রত্যেকটি গ্রামে প্রত্যেকটি সাইনবোর্ড  ও ব্যানারে লুসাই ও ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি বাংলা অক্ষরে লেখা হচ্ছে৷ বাংলা ভাষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এখানে৷ সাইনবোর্ড, ব্যানারগুলিতে সবার আগে বাংলায় লেখা হচ্ছে৷ আশ্চর্যের বিষয় হল জম্পুই পাহাড়ে একজন বাঙালী পরিবারেরও বাসস্থান নেই৷ ব্যবসা করতে ও পাহাড়ের টানে বাঙালীরা জম্পুই পরিদর্শন করতে যান৷ উত্তর জেলার কাঞ্চনপুরমহকুমার্ বাঙালীদের সাথে লুসাইদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক৷ অ-উপজাতি বাঙালীদের কোন ধরণের দাবী বা আবেদন ছিল না জম্পুই পাহাড়ে কাগজপত্রে, সাইনবোর্ড, ফেসটুনে মিজোভাষা ও ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষার ব্যবহার করা হোক৷ কিন্তু লুসাইরা জাতি-উপজাতির মধ্যে সংহতি বাড়াতে জম্পুই পাহাড়ের সবকটি গ্রামের কোনায় কোনায় যে সাইনবোর্ড লিখে টাঙিয়ে দিয়েছে সেগুলিতে প্রথমেই বাংলা ভাষার ব্যবহার করেছে৷ স্বাভাবিকভাবে এতে বাঙালীরা খুব খুশি৷ এমনিতেই জম্পুই পাহাড়ের সামাজিক সংস্থা ‘মিজো কনভেনশনের’ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কাঞ্চনপুরের সামাজিক ফোরাম নাগরিক মঞ্চকে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়৷  বুদ্ধিজীবীদের ধারণা, আগামী দিনে এই জম্পুই পাহাড়বাসীদের বাংলা প্রীতি ত্রিপুরা রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলেও সৌভ্রাতৃত্বের বার্র্ত বহন করবে৷