‘‘জানো চক্কোত্তি, আমার জীবনের ওপর দিয়ে দু’টো বড় বড় ঝড় বয়ে গেছে৷ একটা কমেডির (মিলনান্ত নাটক) মলয় পবন , আর একটা ট্র্যাজেডির (বিয়োগান্ত নাটক) সাইক্লোন৷
চকিত চক্কোত্তি বললে--- বল, বল, শুনি, শুনি৷ আ-হা-হা , না শুনেই তোমার ট্র্যাজেডির জন্যে দুঃখ হচ্ছে৷ আর কমেডির জন্যে তোমাকে অভিনন্দন জানাতে সাধ যাচ্ছে৷ বল, বল, শুনি শুনি৷
বাটারব্রেড বললেন--- জানো, পৃথিবীতে যা অতি বিরল, আমার জীবনে তাই-ই হয়েছে৷ আমার জন্মতিথি আর আমার স্ত্রীর জন্মতিথি একই দিনে৷ অর্থাৎ একটা দিনেই ঢালাওভাবে জন্মতিথি উদ্যাপন করলেই দু’জনের কাজই চলে যায়৷ আর ট্র্যাজেডির দুটো অংশ রয়েছে৷ একটা অংশ হচ্ছে, একই দিনে দু’জনের জন্মতিথি থাকায় প্রীতি-উপহার পরিমাণে একটু কম পাই৷ দু’টো আলাদা দিন হলে পৃথকভাবে যতটা পাওয়া যেত এতে তার চেয়ে কম আসে ৷ বুঝ্ছ তো ! এটা ট্র্যাজেডির নয় কি? (বাটারব্রেড তিনবার ঢোক গিলে বললেন) আর ট্র্যাজেডির দ্বিতীয় হৎ অংশ হচ্ছে এই যে আমাদের জন্মতিথি প্রতি বছর উদ্যাপন করা যায় না৷
চকিত চকোত্তি বললে --- কেন, কেন, কেন! একী অলক্ষণে কথা! বাটারব্রেড বললেন, --- আমাদের জন্মতিথি ২৯শে ফেব্রুয়ারী৷ চার বছর পর পর আমাদের শুভদিন আসে৷ এ কী কম দুঃখের কথা!
চকিত চক্কোত্তি বললে--- সত্যিই ! এত বড় ট্র্যাজেডিও মানুষের জীবনে ঘটে ! তোমার দুঃখের কথা ভেবে বন্ধুর আমার টেম্স নদীতে ঝাঁপ দিয়ে হারিকিরি করতে ইচ্ছে যায়৷
এবার চকিত চক্কোত্তির বলার পালা শুরু৷ সে বলল--- আমার জীবনটা ট্র্যাজেডিতেই ভরা আর ট্র্যাজেডির সূত্রপাত হয়েছে যে অশুভক্ষণে আমার বিয়ে হয়েছিল সেই মুহূর্ত থেকেই৷
বাটারব্রেড বললেন--- কেন, কেন, কেন! এ কী অলক্ষুণে কথা, একী অলুক্ষণে কথা৷
চকিত চক্কোত্তি বললে--- এমন দিন যায় না যে দিন আমার স্ত্রী আমার সঙ্গে ঝগড়া করে আমাকে না বলে থাকে, ‘‘এই আমি বাপের বাড়ি চললুম, দেখি কে তোমাকে ভাত-জল দিচ্ছে৷’’ আর জানো লাফিংষ্টক সাহেব, আর একটা ট্র্যাজেডি হচ্ছে --- যে ট্র্যাজেডি হয়তো বা আজ পর্যন্ত কোন মানুষেরই অদৃষ্টে হয়নি (চকিত চক্কোত্তি গুণে গুণে সাতবার ঢোক গিয়ে নিলে ও তারপরে বললে) আর তা হচ্ছে....
......আর তা’ হচ্ছে..... .আর তা’ হচ্ছে আমার বিয়ের দিন আর আমার স্ত্রীর বিয়ের দিন একই৷
বাটারব্রেড বললে--- অদ্ভূত ! অদ্ভূত! মিরাক্ল্! মিরাক্যাল্ ! এ দুঃখু তুমি রাখবে কোথায় বন্ধু, এ দুঃখের ফ্রাক্শন (ভগ্ণাংশ) আমাকেও দাও৷
(প্রভাতরঞ্জন সরকারের গল্প সঞ্চয়ন থেকে)