এন.আর.সি এর মতো কালাকানুন বিদেশী সমস্যা সমাধানের পথ নয়

লেখক
মুশাফির

বর্তমানে মানুষের সমাজ অনেক বড়ো হয়ে গেছে৷ অনেক ছোট বড় জনগোষ্ঠীর সমাজ মিলে মিশে এক হয়ে গেছে৷ সংকীর্ণ জাতপাত আজ মানুষের সমাজকে টুকরো টুকরো  করে রাখতে পারবে না৷  পৃথিবী হয়ে গেছে  আজ একটা বৃহৎ পরিবার৷ তাই আজ মানব  সমাজ এক ও অবিভাজ্য৷

আজকের  রাষ্ট্রগুলি কিন্তু সেই পুরাতন চিন্তা ভাবনা নিয়ে চলছে৷  ভারত বিরাট একটি ভূখণ্ডে অবস্থান করছে৷ বহুভাষাভাষীর মানুষ এখানে  বাস করছে৷ নানা ধর্মমতে  তারা বিশ্বাসী৷ তাই ভারতের  যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা হবে উদার ও মানবিক মূল্য বোধের পীঠস্থান৷ তাই রবি ঠাকুর বলতেন

‘‘দেবে আর নেবে, মেলাবে মিলিবে যাবে না ফিরে,

 এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে৷’’

হঠাৎ দেখা গেল বর্ত্তমান কেন্দ্র সরকার শাসনে এসে এন.আর.সি বলে একটা অত্যন্ত সংকীর্ণ কালা কানুনকে বেশী করে  মদৎ দিচ্ছে মানবিক মূল্যবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে৷ এতে কিছু  সংঘটন যারা সাম্প্রদায়িক মানসিকতাকে মদত্ত ও প্রশ্রয় দেয় তারা মজা লুটছে৷ স্মরণে রাখা দরকার একদল কুচক্রী অতীতের ভারতবর্ষকে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে ভাগ করে ছিল৷ সেই সাম্প্রদায়িকতার শিকার হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ জন্মভূমি ত্যাগ করে একবস্ত্রে সঙ্গে কিছু না নিয়ে এই ভারতে আশ্রয় নেয়৷ তারা মূলতঃ  হতভাগ্যপূর্ববঙ্গের্ হিন্দু সম্প্রদায়৷ তারাই ভারতের  পূর্ব প্রান্তের খণ্ডিত বিভক্ত রাজ্যগুলিতে এসে ওঠে৷ তাদের  অনেকের বাড়ি সীমান্তে,আত্মীয়স্বজন যে ছিল না তা নয়৷ কিন্তু  তবু তারা  তো সেই অখণ্ড ভারতেরই সন্তান৷

তাদের নিয়ে আজ কাটাচেঁড়া হচ্ছে! এ কেমন কথা? তাছাড়া ভারতে প্রতিবেশী দেশের বহু মানুষ বছরের পর বছর বাস করছে ইংরেজ ও মুসলমান রাজাদের আমল থেকে৷ তাই আজ কি সাজে সেই ৭২ বছর  আগে যে দেশ ভাগাভাগি হয়েছে তাকে নিয়ে  নানাভাবে  কাটাছেড়া করা? এন.আর.সির তলোয়ারের আঘাতে তাদের মানসিকভাবে রক্তাক্ত করে বিদেশী আখ্যা দিয়ে পথের  ভিখারী করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একটা নোতুন সমস্যা সৃষ্টি করা! অসমের গদীতে যারা আছে, সেই  অসমীয়ারাই তো ব্রহ্মদেশ (মায়ানমার) থেকে আসা বিদেশী৷ তাই তাদের  স্বার্থে অখণ্ড ভারতের বাঙালী জনগণকে বিদেশী বানানোর  চক্রান্তকে অবশ্যই বাঙালী জনগোষ্ঠীকেই রুখতে হবে৷ তাছাড়া  অনেক উদ্বাস্তুতো পথেই মানুষ আর পথেই তাদের বাস৷ আজ পর্যন্ত বাংলায় কোন উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধান করাই হয়নি সংকীর্ণ দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থে! আজকের মাতববর নেতানেত্রীদের মনে রাখা দরকার রাজনীতির মূল অর্থ হলো---নীতির রাজা৷  কেউ যেন দলীয় স্বার্থে তার কদর্য ব্যাখ্যা না করে৷ এতে ভয়ংকর সর্বনাশ হবে৷ হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে বাঙালী জনগোষ্ঠীকে এদেশেই  স্থান দিতে হবে৷

বিদেশী বলে তাদের কোথায় তাড়ানো হবে? বাংলাদেশ বলেছে---তাদের দেশের কেউই ভারতে নেই৷ নোংরা আইনের কচকচানীতে একটা অত্যচারীত, নির্যাতীত জনগোষ্ঠীর নারী পুরুষ  দীর্ঘ বছর ধরে জীবন-মৃত হয়ে থাকতে পারে না৷ এটা মহান মানবতার  পরিপন্থী! তাই আজ এই জঘন্য ষড়যন্ত্রের উপযুক্ত  জবাব দিতে হবে তাঁদের যাঁরা মানবতার পূজারী৷ ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ খুলে দিতে হবে৷ এই ব্যাপারে প্রয়োজনে  ইউএন  ও-তে  নালিশ জানাতে হবে৷ বিশ্ববিবেকের কাছে আবেদন করতে  হবে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে এই ধরণের নির্মম অত্যাচারের বিরুদ্ধে৷

বর্ত্তমান সভ্য জগতে  যদি ভারতের মতো  দেশে স্থায়ী মানুষ স্থান না পায়, তাহলে কি তারা চাঁদে পাড়ি দেবে না মঙ্গলগ্রহে  তাদের শাসক দল পাঠাবে?

অত্যন্ত দুঃখের  সঙ্গে বলতে হয় যদি  এদেশের এই সমস্যা, তাহলে ছিটমহল বিনিময়ের সময় সরকার ৪০ বর্গ মাইল জমি বাংলাদেশকে ছেড়ে দেয় কী কারণে? এদের তো বাসস্থান করে দিতে পারতো সেই ৪০ বর্গমাইল ভূখণ্ড অসম ও পশ্চিম বাংলার  লাগোয়া বাংলাদেশের কাছ থেকে নিয়ে৷ তাতে মানবিকতা রক্ষা পেত৷ আর ভারতের  যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা সার্থক হতো৷ কোথায় হতভাগ্যদের তাড়াবে সরকার  সেটা ভেবেছ  কী? আপেক্ষিক জগতে  পুরাতন সেই জাতি  শব্দটাইতো বিশ্বৈকতাবোধে আজ মিলে গেছে৷  সে কথা অস্বীকার  করার অর্থ হলো এক ধরণের  মারাত্মক সংকীর্ণতা৷ আজ মানবসমাজ  এক ও অবিভাজ্য৷ বর্ত্তমানে হিন্দু মুসলমান  খ্রীষ্টান, ইত্যাদি সবার স্বার্থ এক৷ মানুষ মানুষ ভাই ভাই৷ সব মানুষের একই প্রয়োজন একই অভাব অনটন৷ ভারতের মতো মহামিলনের তীর্থক্ষেত্রে সংকীর্ণতার কোন স্থান নেই৷  বিশ্ব সেই এক সৃষ্টিকর্র্ত্তর সৃষ্টি৷ তাঁর বহু নাম ঈশ্বর, গড্, আল্লাহ বহু ভাষায় তিনি ব্যক্ত, কিন্তু তিনি সেই এক ও অদ্বিতীয়৷ আপেক্ষিক জগতের শাসকদের সেটাকে মানতেই হবে৷ তা না হলে পরিণতি হবে ভয়ঙ্কর৷  মানবতার অবমাননা ঈশ্বর কখনোই সহ্য করবেন না৷

অত্যন্ত দুঃখের কথা দেশের মানুষের পানীয় জলটুকু যারা দিতে পারে না৷  দুর্নীতিতে ডুবে যাচ্ছে দেশ৷ আর্থিক  ও সামাজিক  দিকে কোটি কোটি মানুষ পিছিয়ে পড়ছে৷ গুটি কয়েক মানুষ কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছে৷ দেশের শাসকগণের লক্ষ্য শুধু গদীতে বসা৷ দলবাজিতেই দেশ ধবংস হচ্ছে৷ এর আশু পরিবর্ত্তনটাই জরুরী৷ ভারত সব দিক থেকে ব্যর্থ ঘৃণ্য দলীয় রাজনীতির কারণে৷ তাই সৎ নীতিবাদী দেশসেবক তরুণ তরুণীদের আজ সমাজ আন্দোলনে এগিয়ে এসে ভারতের গৌরবকে পৃথিবীতে স্থাপিত করতে হবে৷

ভারত বিশ্বৈকতাবোধে আধ্যাত্মিকতায় পৃথিবীকে নোতুন পথ দেখাবে৷ বিশ্বকে হানাহানি কাটাকাটি থেকে মুক্ত করবে অচিরে৷