কৃষিজাত পণ্যকে শিল্পে রূপান্তরিত করার কাজে সমবায়কে গুরুত্ব দাও

লেখক
প্রভাত খাঁ

বর্ত্তমানে সাধারণ জনগণ সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে একেবারে  পঙ্গু হয়ে পড়েছে৷ তাদের দিকে  কি কেন্দ্র আর কি রাজ্যগুলির নজর নেই৷ রাজনৈতিক দলগুলো সদাসর্বদা ব্যাস্ত কি করে  কেবল গদী সামলানো যায়৷ আজ এই রাজ্য তথা ভারতের অন্য রাজ্যগুলির বিশেষ করে  লক্ষ লক্ষ যে  গ্রাম রয়েছে সেই গ্রামের কৃষি উৎপাদিত শস্যকে কাঁচামাল হিসাবে না দেখে কৃষিজাত পণ্যকে শিল্পজাত পণ্যে রূপান্তরিত করে গ্রামগুলির অর্থনৈতিক উন্নয়নে মন দেওয়া উচিত৷

আজ দেশে ভয়ংকর বেকার সমস্যা৷ সমাধানের পথ কী? বহুপূর্বে গ্রামের মানুষ যেমন স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনৈতিক  অঞ্চল হিসাবে গড়ে তুলতে স্বচেষ্ট ছিলেন, সেইভাবে বিজ্ঞানের  সহায়তা নিয়ে গ্রামকে আর্থিক দিক থেকে উন্নত করে বাঁচার লড়াইয়ে মন দিতে হবে৷

বেকার সমস্যা সমাধানে বর্ত্তমান সরকার ব্যর্থ কারণ তারা ধনীদের দিকেই চেয়ে আছে৷ লোকসংখ্যা যেখানে বেশী বেকার সংখ্যাও সেখানে বেশী৷ সেখানে বৃহৎ শিল্প বেকার সমস্যা সমাধানের পথ নয়৷ সেখানে বেকারদের নিয়োগ করতে হবে ছোট ছোট কুটির শিল্প ঘটনের  মাধ্যমে৷  এই কুটির শিল্প হবে আঞ্চলিক কৃষিজাত দ্রব্যগুলির ওপর নির্ভর করেই৷ যেমন পাট থেকে পাটজাত শিল্প, পাট সিল্কের কাপড়, আলু থেকে আলুজাত শিল্প যেমন বেকড্ এ্যালকোহল, আলুর চিপ্ প্যাকেটজাত শুকনো আলু ইত্যাদি তৈরী করা, কলা, আম, কাটাল ইত্যাদি থেকে জ্যাম জেলি, আচার, ডাল থেকে পাঁপড় ইত্যাদি করে বিক্রির ব্যবস্থা করলে  তাতে  অর্থ রোজগার বেশী হবে ও কর্মসংস্থান হবে স্থানীয় ছেলেমেয়েদের৷ সমবায় পদ্ধতিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে৷ ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারেও সেই সমবায় পদ্ধতির  গুরুত্ব থাকবে  কারণ সমষ্টিকে নিয়েই সমাজ তাই সমষ্টির উন্নয়ণের কথা ভেবেই সেই সমাজকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে আঞ্চলিক ভিত্তিতে৷

স্মরণে রাখা দরকার ভারতের যে গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থা এক সময় স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল, তাকে বিদেশী ইংরেজ শাসক ধবংস করে দেয়৷ সেই কুটির শিল্প  ধবংস করেই তারা  তাদের দেশের উৎপাদিত  ভোগ্যবস্তু  এনে বিক্রি করে নিজেরা আর্থিক  দিক  থেকে স্বচ্ছল হয় আর ভারতের কুটির শিল্পকে ধবংস করে দেয়৷ পরে  বড়ো বড়ো শিল্প স্থাপন করে যন্ত্র দানবের সহায়তায় ও এদেশের সস্তার শ্রমিক পেয়ে ভোগ্যপণ্য উৎপাদন করে দেশীয় বাজারকে ধবংস করে দেয়৷ তাইতো  একসময়ে স্বাধীনতা আন্দোলন কারীরা বিদেশী জিনিসের  ‘বর্জন’ আন্দোলনে সামিল হয়৷ কিন্তু দুর্র্ভগ্যের কথা যে গ্রামগুলি আর্থিক  দিক থেকে  স্বয়ংভর  ছিল, দেশের স্বাধীনতা আসার পর সেই গ্রামগুলিকে  আর্থিক  ও সামাজিক দিক থেকে  গড়ে তোলার  কোন  পরিকল্পনা সরকার নেয়নি৷ নিলেও সেই ‘ব্লকউন্নয়নকে’’ একপেশে করে রেখেছে৷ তাই আজ চরম বেকার  সমস্যা সমাধানে বিকেন্দ্রিকভাবে ব্লকভিত্তিক পরিকল্পনার ওপর  জোর দিয়ে ভারতকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে৷ আর সমব্যয়কে অগ্রাধিকার দিতেই হবেই৷   সমাজসেবী সংঘটন ও সরকারকে  এই কাজে উৎসাহ দিতে হবে৷ স্মরণে রাখতে হবে গ্রামের  প্রান্তিক চাষী ও ক্ষুদ্র কুটির শিল্প যাদের জীবিকা সেই পরিবারগুলি বর্ত্তমানে আর্থিকও সামাজিক শোষণে  আর্দূসৃত পড়েছে৷ তাদের বাঁচার  একমাত্র পথই হলো নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোও  পরিবারগুলির ছেলে মেয়েদের আর্থিক দিক থেকে স্বয়ংভর করে গড়ে তোলা৷ একাজে তাদের এগিয়ে আসতে হবে৷ তাই এই লড়াই তাদের একার নয় স্থানীয় অধিবাসীরা  এই সত্যটাকে বুঝে কৃষিকে নিজেরাই শিল্পে  রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হোন৷ ছোট ছোট ক্ষুদ্র প্রান্তিকচাষী পরিবারগুলি এই পথে এগিয়ে এলে তারা  বাঁচবে ও গ্রামগুলি স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে নিজেদের পায়ে  দাঁড়াতে পারবে৷ কারোর কৃপাপ্রার্থী হতে হবে না৷