ঊষর ঃ ‘ঊষ’ মানে নোনা বা নোনতা জল৷ ঊষর মানে নোনা জলে যে ভূমি ৰন্ধ্যা হয়ে গেছে৷ অনেকে যে কোন অনুর্বর ভূমিকে ঊষর ভূমি বলে থাকে৷ তা ৰলা উচিত নয়৷ সমুদ্রের নিকটস্থ এলাকায়, যেমন দক্ষিণ ৰাঙলায় কিছু জমিতে নোনা জল ঢুকে তাকে চাষের অযোগ্য করে দেয়৷ ‘ঊষর’ শব্দটি কেবল সেই সব জমি সম্বন্ধেই প্রযোজ্য৷ এই ঊষর জমি একেবারে ফেলে না রেখে একটু চেষ্টা করলে লঙ্কা, টম্যাটো, বেগুন, উচ্ছে, কয়েকটি কন্দ জাতীয় শস্য ও চাষ-কার্পাস হতে পারে৷ (কার্পাস সাধারণতঃ দু’ধরণের গাছ-কার্পাস ও চাষ-কাপাস৷ গাছ-কার্পাসের গাছ সাধারণতঃ আকারে বড় হয়, বছরের পর বছর ফসল দিয়ে থাকে ও সাধারণতঃ চাষ-কার্পাসের চেয়ে লম্বা আঁশের Long staple) হয়৷ প্রাচীন ৰাঙলায় এই গাছ-কার্পাস থেকেই মসলিন ও অন্যান্য উন্নত মানের বস্ত্রাদি প্রস্তুত করা হত৷ বর্দ্ধমান, বাঁকুড়া ও হুগলী জেলার অংশবিশেষ গাছ-কার্পাসের চাষের পক্ষে উপযুক্ত৷ চাষ-কার্পাস কয়েক মাসের ফসল মাত্র৷ হেমন্ত ঋতু থেকে বসন্ত পর্যন্ত এর চাষের উপযুক্ত সময়৷ ঊষর মাটিতে কিছুটা পরিচর্যা করলেই চাষ-কার্পাস হতে পারে)৷
ঊষা/ঊষস্ ঃ যে আবরণ উন্মোচন করে অর্থাৎ যোগারূঢ়ার্থে অন্ধকারের আবরণ সরিয়ে আলোকের পথ করে দেয়৷ সূর্যোদয়ের পূর্বেকার ৪৫ মিনিট সময়কে ‘ঊষা’ ৰলা হয় ও সূর্যোদয়ের পূর্বেকার ৪৫ মিনিট সময় থেকে সূর্যোদয়ের পরেকার ৪৫ মিনিট সময় পর্যন্ত মোট ১১/২ঘণ্টা সময়কে ৰলে বাহ্ম মুহূর্ত৷ প্রাচীনকালের মানুষের কাছে রাত্রির অন্ধকার ছিল এক ভয়াবহ জিনিস৷ যত বিপদ-আপদ এই রাত্রিতেই মূর্ত হয়ে উঠত৷ তাই অতি প্রাচীনকালে, এমনকি বৈদিক যুগের গোড়ার দিকেও তারা কালরাত্রির অবসানের জন্যে দেবতার স্তুতি গাইত, রাত্রির অবসান ঘটিয়ে ঊষার আগমনের জন্যে৷ ঊষা বৈদিক যুগে দেবী রূপে কীর্ত্তিতা ও বন্দিতা হতেন৷
উষ্মা ঃ মানে উত্তাপ, ও সেই অর্থে ‘ক্রোধ’৷
ঊহ ঃ তরঙ্গের ঊধর্বাংশ, বিবাহ, পরিবর্তনীয়, বর্জনীয় প্রভৃতি নানান অর্থে শব্দটির ব্যবহার আছে৷
ঊহ্য ঃ পরিবর্তনীয় বা বর্জনীয়৷ বাংলায় ‘হ্য’ hya) লিখলে তার উচ্চারণ হয় ‘ঝ্য’ jhya) অর্থাৎ ‘উহ্য’ u´hya) লিখে পড়তে হৰে ‘ঊঝা’ u´jhya)৷ সংস্কৃতে ‘হ্য’ -এর উচ্চারণ হ্য hya) ও ঝ্য jhya) দুই-ই চলৰে৷ আসলে ‘ঝ’-এর সঙ্গে ‘য’-ফলা লাগে না৷ তাই ‘হ্য’ লিখে ‘ঝ্য’-এর মত উচ্চারণ করলে কোন অসুবিধা বা গোলমাল হয় না৷ তাছাড়া ক্য, খ্য, গ্য, প্রভৃতিতে যেমন সুন্দরভাবে ‘য’-ফলার উচ্চারণ করা যায় ‘হ্য’-তে তেমন উচ্চারণ করা যায় না৷ ‘হ্য’ লিখলেও তার উচ্চারণ হয়ে যায় ‘হি’৷ এই জন্যেই ৰোধ হয় ‘হ্য’ hya)-কে ‘ঝ্য’ jhya) উচ্চারণ করার বিধি প্রবর্তিত হয়েছিল৷ বাংলায় ‘উহ্য’ u´hya) লিখে ‘ঊঝ্য’ u´jhya) উচ্চারণ করাই সঙ্গত৷
উহিনী ঃ সৈন্যসংখ্যা৷ অক্ষ+ ঊহিনী= অক্ষৌহিণী৷ ‘উহিনী’ ৰানানে দন্ত্য ‘ন’ তবে ‘অক্ষৌহিণী’ ৰানানে ‘ণ’ হৰে৷ শব্দটির জন্যে ণ-ত্ব বিধানের এটি একটি বিশেষ ব্যবস্থা৷ (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)