ঐরাবত

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

 বৈদিক ভাষায় ‘ইর’ ধাতুর মানে হচ্ছে নড়াচড়া করা৷ ‘ইর্‌’ ধাতুর উত্তর ‘অল’ প্রত্যয় করে আমরা ‘ইর্‌’ শব্দ পাচ্ছি (স্ত্রীলিঙ্গে ‘ইরা’) যার ভাবারূঢ়ার্থ হচ্ছে  যা নড়াচড়া করে,আর যোগারূঢ়ার্থ হচ্ছে ‘জল’৷ এই ‘ইর’ বা ‘ইরা’ যাতে আছে এই অর্থে  ইর+  মতু+প্রথমার একবচনে ‘ইরাবান্‌’ স্ত্রীলিঙ্গে ‘ইরাবতী’৷ ‘ইরাবৎ’ বা ইরাবতী শব্দের ভাবারুঢ়ার্থ হ’ল বৃহৎ জলাশয়৷ যোগারূঢ়ার্থ ‘ইরাবৎ’ মানে সমুদ্র আর ‘ইরাবতী’ মানে ৰড় নদী৷ পঞ্জাবে ‘ইরাবতী’ নামে একটি প্রসিদ্ধ নদী আছে, ইংরাজীতে যাকে ‘রাবি’ Ravi) ৰলা হয়ে থাকে৷ ব্রহ্মদেশেরও সর্বপ্রধান নদীটির নাম ইরাবতী ৷ রেঙ্গুন শহর এই ইরাবতীর ৰ-দ্বীপেই অবস্থিত৷ পৌরাণিক কথা অনুযায়ী সমুদ্র বা ইরাবৎকে মন্থন করে কয়েকটি দুর্লভ বস্তু পাওয়া গেছল৷ যেমন মহালক্ষ্মী, পারিজাত, বৃহদাকার হস্তী ইত্যাদি৷ এই বৃহদাকার হস্তীই হয়েছিল ইন্দ্রের বাহন৷ যেহেতু সে ইরাবৎ থেকে উত্থিত হয়েছিল তাই ‘ইরাব+ তদ্ধিতার্থে ‘অণ্‌’ প্রত্যয় করে আমরা ‘ঐরাবত’ শব্দ পাচ্ছি৷ এর ইংরেজী হচ্ছে ‘ম্যামথ্‌’ mammoth)৷ তোমরা কোন প্রকাণ্ড জনসভাকে নিশ্চয়ই ম্যামথ্‌ মীটিং mammoth meeting)  ৰলে থাক৷ এই ম্যামথ্‌  mammoth) ছিল একটি প্রাগৈতিহাসিক জীব যার সংস্কৃত নাম ‘ঐরাবত’ বর্তমান পৃথিবীতে যে কয়টি গোষ্ঠীর হাতী পাওয়া যায় তাদের মধ্যে দীর্ঘতম হ’ল আফ্রিকান হাতী৷ এরা বুদ্ধিতে কিছুটা কম কিন্তু উচ্চতায় প্রকাণ্ড৷ অনুমিত হয় প্রাগৈতিহাসিক যুগের ম্যামথ* mammoth) ছিল এই আফ্রিকান হাতীর চেয়েও প্রায় দ্বিগুণের মত ৰড়, গজদন্তও ছিল অতি দীর্ঘ৷ এই বুদ্ধিহীন বৃহদাকার জন্তুটি আনুমানিক পাঁচ লক্ষ বছর পূর্বে ধরাপৃষ্ঠ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে৷ রাঢ়-ৰাঙলার বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া অঞ্চলে এই ম্যামথে্‌র জীবাশ্ম Fossil) কিছু কিছু পাওয়া গেছে৷ কিছু পাওয়া গেছে রাঁচী জেলার পূর্বাংশে সুবর্ণরেখা উপত্যকাতেও৷ যাই হোক, মানুষ যতটা জেনেছে তার থেকে মনে হয় প্রাচীন কালের ডাইনোসোরের পরেই আকারে এই ম্যামথরাই mammoth) ছিল পৃথিবীর ৰড় জন্তু অর্থাৎ এরা ছিল পশু সমাজের ‘মেজদা’৷ তবে মনে রাখা দরকার যে ডাইনোসোর ও ম্যামথ একই সময়ে ছিল না৷ ডাইনোসোরের মধ্যেও বৃহদাকারের ডাইনোসোরেরা (মুখ্যতঃ শাকাহারী) ছিল ক্ষুদ্রতর আকারে ডাইনোসোরদের (মুখ্যতঃ মাংসাহারী) চেয়ে বেশী প্রাচীনতর অনুমিত হয় মাংসাহারী ক্ষুদ্রাকৃতি ডায়নোসোরদের ভোজ্যরূপে ব্যবহৃত হ’তে হতে বৃহদাকারের ডাইনোসোরেরা বিলুপ্ত হয়ে গেছল৷ বৃহদাকারের ডাইনোসোরেরা আগেই পৃথিবীতে এসে আগেই পৃথিবী থেকে সরে গেছে৷ ক্ষুদ্রাকার ডাইনোসোরেরা খুব সম্ভব তুষার যুগে ৰরফের তলায় চাপা পড়ে ধবংস হয়েছিল৷

হ্যাঁ, ৰলছিলুম ঐরাবতের কথা৷ ইরাবৎ থেকে উত্থিত এই অর্থে ম্যামথকে যদি বোঝানোও হয়ে থাকে কিন্তু আসলে আমরা সমুদ্র থেকে উত্থিত বা সমুদ্রজাত সকল বিষয়কেই ভাবারূঢ়ার্থে ঐরাবত ৰলতে পারি---তা সে আকারে যত বৃহৎ বা যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন৷ কল্পনার পারিজাত ফুল, কল্পনার অমৃতও ঐরাবত, গৌরাণিক মহালক্ষ্মীও ঐরাবতী৷ আবার প্রাগৈতিহাসিক যুগের শীলাকন্থ ও আজকের যুগের শঙ্খ, অক্টোপাস, আয়োডিন প্রভৃতিও ভাবারূঢ়ার্থে ঐরাবত পর্যায়ের মধ্যে পড়ে৷ যোগারূঢ়ার্থে কেবল ম্যামথই ঐরাবত, আর কেউ নয়৷ ‘ইরবৎ, ইরবতী, ঐরবত শব্দগুলিও শুদ্ধ, তবে ব্যবহারে নেই৷

                                                ---শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে গৃহীত