দরদী মেয়ে

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

বাঁকুড়া জেলায় দুর্ভিক্ষ লেগেছে৷ ঘরে ঘরে শুধু নেই নেই রব৷ আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা---সকলেই উদরান্নের জন্য পাগলা কুকুরের মতো ছোটাছুটি করছে৷ কুখাদ্য-অখাদ্য খেয়ে অকালে মানুষগুলো মরছে! কে কাকে স্যহায্য করবে? সকলেই যে ভিখারী---সাহায্যপ্রার্থী?

এক ব্রাহ্মণ বড় গরীব কিন্তু তাঁর মনটা ছিল করুণায় ভরা৷ দরিদ্রের হাহাকার শুণে তাঁর অন্তরাত্মা কেঁদে উঠলো৷ সেবার গোলায় তাঁর কিছু ধান তোলা ছিল৷ কিন্তু সেগুলোছিল ভবিষ্যতের সংস্থান! ব্রাহ্মণ ভাবলেন আগে ক্ষুধাতুররা খেয়ে তো বাঁচুক, ভবিষ্যতের চিন্তা সময় করা যাবে৷ বর্তমানের আত্যন্তিক প্রয়োজনে ব্রাহ্মণ ভবিস্যতের কথা ভুলে গেলেন৷ স্বেচ্ছায় অনায়াসে তিনি বরণ করে নিলেন অপরিগ্রহ ব্রত৷

ব্রাহ্মণ মনস্থির করলেন একটা অন্নসত্র খুলবেন৷ মেয়ের কাছে সে ব্যাপার প্রকাশ করতেই মেয়ে তো আহ্লাদে নেচে উঠলো৷ এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে সে হাঁড়ি-কড়াই বের করে তখনই রীতিমত কাজ শুরু করে দিল৷ চালে-ডালে খিচুড়ি চাপনো হল৷ দরিদ্র নারায়ণের সেবা হবে৷ ব্রাহ্মণের মেয়ের স্ফূর্তি আর ধরে না৷ রান্নার কাজে সে নাচের ভঙ্গীতে রাঁধুনীকে যোগান দিতে লাগলো৷

 রান্না নির্বিঘ্নে শেষ হলো৷

পঙ্গ পালের মতো সব ক্ষুধার্তরা উঠানে সারি সারি পাতা নিয়ে বসে গেল৷ গরম গরম খিচুড়ি সবে উনুন থেকে নামানো হয়েছে৷ ধোঁয়া উঠছে৷ ফুঁ দিতে দিতে ব্যথা হয়ে যায় ঠোঁট, তবু খিচুড়ি জুড়োয় না৷ খেতে গেলে জিব পুড়ে যায়, কিন্তু পেট তবু মানে না উপবাসের জ্বালা ৷ বেচারা আহারীরা, পড়লো বড় মুস্কিলে৷

ব্রাহ্মণের মেয়ে তাদের এ হেন অসহায়... অবস্থা-দেখে পাখা হাতে ছুটে এলো৷ বাতাস দিয়ে সবার খিচুড়ি সে জুড়িয়ে দিল৷

 গোগ্রাসে পরম আগ্রহে তখন সকলে ‘হাঁপুস-হুপুস’ শব্দে খেতে শুরু করে দিল! আহা কি সুস্বাদু ! ব্রাহ্মণের মেয়েটিকে সেদিন প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করলো সকলে!

 বলো দেখি কে এই মেয়ে দরিদ্রের প্রতি যার এত দয়া? মনে রেখো, এই মেয়েটি হচ্ছেন ক্ষমা, পবিত্রতা, শুদ্ধচিত্ততা, সেবা ও তপস্যার প্রতিমূর্ত্তি শ্রীসারদামণি দেবী৷ বাঁকুড়া জেলার জয়রামবাটী নামক গ্রামে ১২৬০ সালের ৮ই পৌষ তিনি জন্মগ্রহণ করেন৷ তাঁর মাতার নাম শ্রীশ্যামাসুন্দরী দেবী৷ আর. পিতা শ্রীরামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়৷